করোনায় আক্রান্ত বাবা-মা, হয়রানির শিকার পুরো পরিবার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

করোনায় আক্রান্ত বাবা-মা, হয়রানির শিকার পুরো পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে এক দম্পতির করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর পুরো পরিবারকে একের পর এক অবর্ণনীয় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বাড়িওয়ালা আর প্রতিবেশীদের চাপে বাবাকে নিতে হয়েছে হাসপাতালে। আর করোনাভাইরাস পজিটিভ মাকে হাসপাতালে নিতে শত চেষ্টাতেও অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি।

অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে সিএনজিতে করে করোনাভাইরাস পজিটিভ মাকে হাসপাতালের নেওয়ার পথে ইঙ্গিত পেয়ে চালক জোর করে তাদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। আর স্বামী-স্ত্রী করোনা পজিটিভি জেনে বাড়িওয়ালা ভয়ে তাদের দুই ছেলেকে ঘরে ঢুকতে দিতে চাইছেন না।

এই হয়রানির কথা বিবিসির এক সাংবাদিককের কাছে বলেছেন ওই দম্পতির বড় ছেলে। তার নিজের মুখে সেই দুঃস্বপ্নের কাহিনী :

বেশ কদিন ধরে আব্বুর জ্বর কমছিল না দেখে ৮ তারিখে (মার্চ) উনি নিজেই টেস্ট করাতে যান পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে।

পরের দিনই হাসপাতাল থেকে ফোন করে আমাকে জানায়, ‘আপনার বাবার পজিটিভ আসছে। আপনি যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে আইইডিসিআরে ফোন দেন।’

পরিবহন বন্ধ থাকায় রোগী নিয়ে যাতায়াত খুব কঠিন হয়ে পড়েছে

আমি রিপোর্ট আনার পর আইইডিসিআরে ফোন দিলে তারা বলে, সম্ভব হলে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তারাই আবার আব্বুকে ফোন দিয়ে বলে, ‘আপনি যখন সুস্থ আছেন, তখন আপাতত বাসাতেই থাকেন, সমস্যা নাই।’

ওইদিন বাড়িওয়ালাকে কথাটা জানাতে পারিনি। কারণ অনবরত ফোন আসছিল রাত পর্যন্ত। আমরা একটু ভেঙে পড়েছিলাম, হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনা!

পরদিন বাড়িওয়ালা জেনে যায়, হয়তো পুলিশ জানায়। এরপর বাড়ি লকডাউন করে। বিভিন্নভাবে চাপ শুরু হয়। আমি ট্রিপল নাইনে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স আনি। ১০ তারিখ বেলা ১১টার দিকে আব্বুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পরীক্ষার ধকল

তারপর আমার ভাই ও মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাই করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে। ঢাকা মেডিকেলে টিকিট কেটে ফর্ম পূরণ করার পর উনারা বলেন, ‘দেরি হয়ে গেছে, আপনারা কালকে আসেন।’

পরের দিন ১১ তারিখ আমরা তিনজন আবার হাসপাতালে যাই। সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে আমরা আইসোলেশন রুমে বসা।

ঢাকায় রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে

তখন সেখানে পাঁচজন ছিল। দুপুর যত গড়াতে থাকে রোগী ও লোক বাড়ছিল। ওই রুমটার বর্ণনা দেওয়া দরকার। রুমটাতে দুটা বেড। আর তিনটা করে জোড়া লাগানো নয়জনের বসার জায়গা।

একপর্যায়ে ১৯ জন হয়ে গেল ওই রুমের মধ্যে। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসা। কেউ ক্রমাগত হাঁপাচ্ছে। মুখে মাস্ক নাই। কেউ কাশছে। ওখানে বাচ্চারাও ছিল। ৫ বছর, ১০ বছরের বাচ্চা। বয়স্ক লোক ছিল। সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছুই ছিল না।

৩টার দিকে তিনজনের একটা টিম আসে। তারা ছয়-সাতজনের নমুনা নিয়ে চলে যায়। কোনো সিরিয়াল মানা হলো না। জিজ্ঞেস করলে বলে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আসবে। কিন্তু আসতে আসতে সন্ধ্যা সাতটা বাজে।

ওখান থেকে কাউকে বেরও হতে দিচ্ছিল না। আমরা তিনজনই ওখানে ছিলাম। খাবার দাবার কিছুই ছিল না। দুপুরের দিকে লাঞ্চ দিয়েছিলো। ভাত-তরকারী, কিন্তু তা খাবার মত ছিল না।

সারা দিন পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে এসে আরও তিন-চারজনের স্যাম্পল নিল। কিন্তু আমাদের বসিয়ে রাখল। পরে একজন বলেন যে, ‘আপনাদের কাগজ হয়তো হারিয়ে গেছে, আপনি আবার সাত নম্বর রুম থেকে এনে কাগজ জমা দেন।’  পরে আবার ফর্ম পূরণ করে দেওয়ার পর আমাদের স্যাম্পল নেয়।

বয়স্করা রয়েছেন বাড়তি ঝুঁকিতে

তারা বলছিলেন, ১২ তারিখ দুপুরের দিকে রিপোর্ট দেবে। আমি ১০টার দিকে যাই। রুমের সামনে অনেক মানুষ ছিল। একজন আরেকজনের সঙ্গে ঘেঁসে দাড়ানো ছিল দেখে আমি ভয়ে আর এগুইনি। পরে ফাঁকা হওয়ার পর গিয়ে শুনি রিপোর্ট আসেনি।

আবার সাড়ে ৩টার দিকে যাই। তখন বলছে যে আপনার রিপোর্ট ডিরেক্টরের ওখানে আছে। উনি স্বাক্ষর করে নাই, যার কারণে কষ্ট করে আপনি কালকে দশটায় আসেন। সে অনুযায়ী আজকে (১৩ এপ্রিল) আসছি।

তবে এর মধ্যে গতকাল (১২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় আমাকে ফোন দিয়ে জানানো হয়, মায়ের পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। উনারা বলছিল, গতকালই হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কীভাবে নেব, এত রাতে গাড়ি পাবো কোথায়!

পরে আজকে সকালে আম্মুকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসি। কিন্তু আম্মুর রিপোর্টটা পাচ্ছিল না। পরে লোকজন ধরে চাপ দিয়ে আম্মুর রিপোর্টটা বের করি। কিন্তু আমাদের দুই ভাইয়ের রিপোর্ট পেলাম না।

Comment here