চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল নুরার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল নুরার

মোঃ হুমায়ূন কবির, স্টাফ রিপোর্টার : বাবা-মায়ের বড় সন্তান হওয়ার সুবাধে সাবরিনা সুলতানা নুরা একটু বিশেষ নজরেই ছিল সবার। একবারেই নীরব, শান্ত-শিষ্ট নুরা বিশেষ প্রয়োজন না হলে কারও সঙ্গে তেমন কথা বলত না। স্কুল থেকে ফিরেও সারাক্ষণ পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল তার।

শিক্ষা জীবনের প্রতিটি পদে সে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিল। স্থানীয় এইচ এ কে অ্যাকাডেমির একজন ছাত্রী হিসেবে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সে। কিন্তু ফল প্রকাশের আগেই দুস্কৃতিকারীদের হাতে মা, বোন ও ভাইয়ের সঙ্গে বর্বরতার শিকার হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হলো মেয়েটিকে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের একই পরিবারের চারজন খুনের ঘটনার একজন এই মেধাবী নুরা।

এইচ এ কে অ্যাকাডেমির পরিচালক শাহীন সুলতানা দৈনিক মুক্ত আওয়াজকে বলেন, ‘নুরা প্রতিটি পরীক্ষায় সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিল। জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিও পেয়েছিল। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সে অংশ নিয়েছিল। এখানেও ফলাফলে তার ভালো করার কথা।’

শাহীন সুলতানা বলেন, ‘নুরা শিক্ষকদের বলেছিল, সে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চায়। এ স্বপ্নের কথা সে তার বাবা ও মাকেও বলেছিল। তার মা প্রায় সময়েই বিদ্যালয়ে এসে তার সন্তানের লেখাপড়ার খোঁজ নিতেন। নুরা যেন চিকিৎসক হতে পারে সেজন্য তার প্রতি বিশেষ নজর দিতে তিনি শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধও রাখতেন।’

নুরার স্কুলের পরিচালক আরও বলেন, ‘অসম্ভব একজন ভদ্র মেয়ে ছিল নুরা। তার মার্জিত আচরণে সবার বিশেষ নজরেই থাকতো সে। অকালেই নুরার মতো একটি মুকুল এভাবে ঝরে যাবে এ ঘটনা যেন কারও বিশ্বাসই হচ্ছে না।’ যারা এই মেধাবী নুরার স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটিয়েছে, তাদের কঠোর শাস্তির দাবিও জানান তিনি।

নুরার দাদা আবুল হোসেন জানান, তার ছেলে প্রবাসে থাকার পরও তিনি মাঝে মধ্যে তার পুত্রবধূ ও নাতিনদের খোঁজ-খবর নিতে আসতেন। তার পুত্রবধূ অসম্ভব ধার্মিক নারী ছিলেন। তার নাতনিরাও মেধাবী ছিল। বিশেষ কোনো প্রয়োজন না হলে তারা কেউ বাসা থেকে বের হতো না।

তিনি আরও জানান, তার ছেলে কাজলের স্বপ্ন ছিল, সন্তানদের মানুষ করে তবেই প্রবাস থেকে ফিরবেন। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে একদিকে সন্তানদের স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গে তার ছেলের স্বপ্নও নিভে গেল।

গতকাল বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় একটি ফ্ল্যাট বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী ও তাদের তিন সন্তানের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী কাজলের স্ত্রী ফাতেমা, তাদের দুই মেয়ে নুরা, হাওয়ারিম এবং প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল ।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, প্রতি দিনের মতো বুধবার রাতে তারা সবাই নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও তারা কেউ ঘর থেকে বের না হওয়ায় নিহতের স্বজনরা মই বেয়ে দোতলায় উঠে ঘরের মেঝেতে রক্ত দেখতে পায়। পরে শ্রীপুর থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করে। কীভাবে বা কেন তারা খুন হলেন, তা জানতে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেছে।

Comment here