করোনা আক্রান্তের ডায়েরিতে যা উঠে এসেছে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
আন্তর্জাতিক

করোনা আক্রান্তের ডায়েরিতে যা উঠে এসেছে

অনলাইন ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। তিন মাস না পেরোতেই দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। চীনে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও এখন ইউরোপ বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করলেও এখনো আবিষ্কার হয়নি করোনার প্রতিষেধক। এখনো অজানা রয়েছে অনেক কিছুই। শুধু বৃদ্ধরা নয়, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণ-যুবারাও। তাদেরই একজন মার্কিন তরুণী বিজোন্ডা হালিতি। তার সে অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন টুইটারে।

কোভিড-১৯-এ মারা যাওয়া রোগীদের বেশির ভাগই প্রবীণ। আক্রান্তের তালিকা ঘাঁটলে দেখা যায়, তরুণ-যুবাদের মধ্যে এর সংক্রমণ তুলনামূলক কম। তাদের বেশির ভাগ আবার সহজেই সুস্থ হয়ে ওঠে। তা থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান, করোনাভাইরাস মূলত দুর্বল রোগ প্রতিরোধের শরীরকেই কাবু করতে পারে। তাই সাবধান থাকতে হবে বয়স্কদের। আর আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন যারা।

এ খবর শুনে কম বয়সীদের একটা বড় অংশই খুব একটা পাত্তা দেয়নি করোনাভাইরাসকে। মানেনি ডাক্তারদের সাবধানবাণী। তবে ইদানীং বিজ্ঞানীদের সে অনুমানও অল্পবিস্তর ভুল প্রমাণিত হতে শুরু করেছে। কম বয়সীরাও কমবেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাদেরই একজন বিজোন্ডা হালিতি। সম্প্রতি কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ২২ বছর বয়সী মার্কিন এই তরুণী।

জ্বরে পড়েই সেলফ কোয়ারেন্টিনে চলে যান বিজোন্ডা। ১০ দিনের মাথায় যখন নিশ্চিত হলেন আক্রান্ত হওয়ার খবর, তত দিনে সুস্থ হয়ে গেছেন অনেকটাই। দীর্ঘ সে অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন টুইটারে। লিখেছেন কবে কোন উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। বিজোন্ডার সে অভিজ্ঞতা আমাদের সময়ের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রথম দিন

শুরু হয়েছিল শুকনো কাশি ও সামান্য গলা ব্যথা দিয়ে। সে রাতে ভীষণ ক্লান্তি বোধ করছিলাম।

দ্বিতীয় দিন

মাথার কিছু কিছু জায়গায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছিল। জোরে কাশিও দিতে পারছিলাম না। রাতে জ্বর আসে। খুব ঠাণ্ডা লাগছিল। চোখও ব্যথা করছিল। কালশিটে পড়ে গিয়েছিল। নাড়াতেই কষ্ট হচ্ছিল। পরে জেনেছি, ওটা ছিল মাইগ্রেনের ব্যথা।

তৃতীয় দিন

একেবারেই শক্তি পাচ্ছিলাম না। সারা দিন ঘুমিয়েছি। জ্বর ছিল। আরও ছিল শুকনো কাশি, মাইগ্রেনের ব্যথা, ঠান্ডা ও বমি বমি ভাব। সেদিনই ডাক্তার দেখাই। ফ্লু ও স্ট্রেপের পরীক্ষা করাই। কোনোটাই হয়নি। চিকিৎসকের ধারণা, কোনো ধরনের ইনফেকশন। অ্যান্টিবায়োটিকস ও আইবুপ্রফেন (জ্বর ও ব্যথার ওষুধ) দেন। পানি খাওয়া বাড়িয়ে দিই।

চতুর্থ দিন

অবশেষে জ্বর ছাড়ল। দেখা দিল নতুন উপসর্গ—শ্বাসকষ্ট। এত অস্বস্তি লাগছিল, মনে হচ্ছিল কেউ আমার বুকে ইট চাপা দিয়ে রেখেছে। ইন্টারনেট ঘেঁটে নিজে নিজেই একটা পরীক্ষা করি। শ্বাস বন্ধ করে মনে মনে ১০ পর্যন্ত গোনা। পরীক্ষায় ভালোভাবেই উতরে গিয়েছিলাম। এ সময় এসে মনে হলো, কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো দরকার। এটা অবশ্য শুরুতে করালেই সবচেয়ে ভালো হতো। কিন্তু পরীক্ষাটা এখনো সুলভ নয়। তাই ডাক্তাররাও সহজে করাতে চান না। আপাতত সেলফ কোয়ারেন্টিনেই থাকলাম। পানি খাওয়া আরও বাড়িয়ে দিলাম।

পঞ্চম দিন

শ্বাসকষ্টের সঙ্গে যোগ হলো গলা ব্যথা ও কাশি। আগের ডাক্তারকেই আবার দেখালাম। কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে চাইলাম। ডাক্তার বললেন, এখনই প্রয়োজন নেই। জোরাজুরি করলাম। সঙ্গে বুকের এক্স-রে। সেটির ফল হাতে হাতেই পাওয়া গেল। সব স্বাভাবিক। আর কওভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট আসবে পাঁচ-ছয় দিন পর! ডাক্তার উপদেশ দিলেন সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকতে।

ষষ্ঠ দিন

নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিকস ও আইবুপ্রফেন খাচ্ছিলাম। তারপরও গলা ব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট যায়নি। তবে শরীরের দুর্বল ভাবটা কম ছিল।

সপ্তম দিন

শ্বাসকষ্ট যায়নি। তবে গলা ব্যথা ও কাশি সামান্য কমে। আগের চেয়ে শক্তিও বেশি পাচ্ছিলাম।

অষ্টম দিন

উপসর্গের মধ্যে ছিল শুধু সামান্য কাশি। শরীরে শক্তি অনেকটাই ফিরে পেয়েছিলাম।

নবম দিন

কাশিটা একটু বাড়ে। বাকি সব স্বাভাবিক।

দশম দিন

সামান্য কাশি আছে। কফ জমেছে। বাকি সব স্বাভাবিক। শরীরে দুর্বল ভাব আর নেই। ওদিকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। ‘পজিটিভ’। সুস্থ বোধ করলেও তাই সেলফ আইসোলেশনেই থাকছি। আবার পরীক্ষা না করে বের হওয়ার জো নেই। তবে তার জন্য পরীক্ষা করতে রাজি আছেন এমন ডাক্তারের সন্ধান পেতে হবে। এখনো সে সৌভাগ্য হয়নি।

মনে রাখবেন, কোভিড-১৯ হলে শরীর হাইড্রেটেড রাখা খুবই জরুরি। তাই প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করতে হবে। অনেকে ব্যথার তীব্রতা জানতে চাইছেন। এর চেয়ে বাজে রকম ঠান্ডা-কাশিতে আমি আগেও ভুগেছি। ডাক্তার দেখানোর দিনের ব্যথাকে আমি দশে চার দেব। প্রথম তিনটা দিনই ছিল সবচেয়ে কঠিন।

আরেকটা জিনিস সবাই জিজ্ঞেস করছেন—আমি কীভাবে সংক্রমিত হলাম। আমার কাশি শুরু হয় রোববার। বুধ থেকে শনিবার প্রতিদিনই আমি বের হয়েছিলাম। আমার ধারণা, তারই কোনো এক দিন ক্লাবে বা অন্য কোথাও সংক্রমিত হয়েছিলাম। আর সে কারণেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Comment here