কার মাইক্রোবাসে অনুমতি, মোটর সাইকেলে না - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কার মাইক্রোবাসে অনুমতি, মোটর সাইকেলে না

তাওহীদুল ইসলাম : অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ারিং করোনা ঝুঁকিতে এতদিন বন্ধ ছিল। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবির মুখে গতকাল রবিবার ফের এই সেবার অনুমতি দিয়েছে বিআরটিএ। ব্যক্তিগত কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া যাবে। তবে মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন আপাতত বন্ধই থাকছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে। অবশ্য বহু আগে থেকেই যাত্রী পরিবহন করছে মোটরসাইকেলগুলো। তবে অ্যাপ নয় চুক্তিতে।

রাইডশেয়ারিং ব্যবসার অনুমতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তাদের নির্দিষ্ট গাড়ির নম্বর, চালকের বিবরণসহ তালিকা পাঠালে এর ভিত্তিতে সেসব গাড়ি রাইডশেয়ারিং সেবা দিতে পারবে। তার মানে অনুমতি নেই; কিন্তু রাইডশেয়ারিং প্রতিষ্ঠান আছে এমন গাড়িও চলতে পারবে না।

এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জি.) লোকমান হোসেন মোল্লা বলেন, মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। এ ছাড়া এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটবিহীন কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনেও গাড়ি চলতে পারবে না।

করোনায় ২৬ মার্চ সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিলে থেমে যায় রাইডশেয়ারিং সেবাও। ৬৭ দিন পর গণপরিবহন চালু হলেও রাইডশেয়ারিংয়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। গত শনিবার রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে গতকাল এই সেবার অনুমতি দেয় বিআরটিএ।

এর আগে উবার, পাঠাওসহ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করেছিল। তখন জানা যায়, উবারের ১১৮টি গাড়ির মধ্যে দুটি কার এবং ১১৬টি মোটরসাইকেল আর পাঠাওয়ের ১২৬টি বাহনের মধ্যে ১৫টি কার এবং ১১১টি মোটরসাইকেল যথাযথ অনুমতিপ্রাপ্ত। বাকি গাড়ি চলছে অনুমোদন ছাড়াই। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম ১০০ গাড়ি চালাতে পারবে সুনির্দিষ্ট ফি এবং কাগজপত্র জমাদানের মাধ্যমে। বাস্তবতা হচ্ছে- অনুমতি নেই; কিন্তু অ্যাপসের নামে গাড়ি চলছে। আবার অ্যাপস ছাড়াও চুক্তিতে চলছে অনুমোদনহীন গাড়ি। ফলে যাত্রী ও চালকÑ উভয়ের ঝুঁকি রয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে চললে পরিচয় শনাক্ত করা সহজ হয়।

২০১৬ সালে দেশে অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা রাইডশেয়ারিং শুরু হয়। ব্যক্তিগত গাড়ির এ বাণিজ্যিক ব্যবহার দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দেশে। এর পর রাইডশেয়ারিং নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদনের মধ্য দিয়ে ৯টি প্রতিষ্ঠান বৈধতা পেল; কিন্তু ১০০ গাড়ি চালানোর অনুমতি নিয়ে একেকটি প্রতিষ্ঠান অন্তত ১০ গুণ বেশি গাড়িতে রাইডশেয়ারিং করছে। এতে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। একই কারণে যাত্রীদের অভিযোগের ব্যপারে পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। আবার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে না পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী হিসেবে ১৩টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এর মধ্যে প্রথমে ৬টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়। পিকমি লি., কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড, ওভাই সলিউশনস লিমিটেড, চালডাল লিমিটেড, সেজেস্টা লি. ও আকাশ টেকনোলজিস এবং পরে পাঠাও লিমিটেড, উবার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং সহজ লিমিটেড এনলিস্টেড হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ১০০ গাড়ির এনলিস্টমেন্ট দেখিয়ে অনুমোদন নিয়েছে। অথচ গত বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিআরটিএর কাছে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাপসে চলা গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। এ বছরের শুরুর দিকে বিভিন্ন অ্যাপভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ৪ হাজার ৩৮৯টি মোটরসাইকেল এবং ১৮ হাজার ২৫৩টি মোটরকার সেবার দাবি করেছিল।

সূত্রমতে, রাইডশেয়ারিং সেবার মান যাচাই ও যাত্রী-চালকের নিরাপত্তায় নীতিমালায় বড় শর্ত হচ্ছে অ্যাপসে এসওএস বাটন থাকা। এর মাধ্যমে পুলিশের ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে গাড়ি এবং যাত্রী -চালকের অবস্থান শনাক্ত করা যাবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রতিটি যাত্রা পুলিশ কন্ট্রোল রুম প্রয়োজনে সরাসরি অবলোকন করতে পারবে। যাত্রী ও চালকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কন্ট্রোল রুমকে জরুরি বার্তা বা সংকেত পাঠানোর ব্যবস্থা অ্যাপ্লিকেশনে থাকার শর্ত আছে। শর্তটি ‘পরবর্তীতে পূরণ করা হবে’Ñ এমন বিবেচনায় এনিলিস্টেড হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ নম্বরের সঙ্গে অ্যাপসের জিপিএস লোকেশন যুক্ত করার শর্ত নিয়ে শুরু থেকেই টানাপড়েন চলছিল। এটি কবে চালু হবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউই। এ ফলে যাত্রী ও চালকের সুরক্ষা এবং গাড়ির নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।

বিআরটিএর কাছ থেকে রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমতি পেতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য আলাদাভাবে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য ক্যাটাগরিতে জেলা হিসেবে ন্যূনতম ২০টি গাড়ি নামানোর যোগ্যতা অর্জন করলে একই পরিমাণ টাকা দিয়ে এনলিস্টেড হওয়ার সুযোগ আছে। এর বাইরে রাইডশেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট ফি মোটরসাইকেলের জন্য ৫৭৫ টাকা ও চার চাকার বাহনের জন্য ১ হাজার ১৫০ টাকা দিতে হয় ভ্যাটসহ। নিবন্ধনের জন্য বিআরটিএর অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

অনলাইনে আবেদন করে অনলাইনেই এনলিস্টেমেন্ট সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। এ ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠান ও চালকের ভোগান্তি কমেছে। আর অতিরিক্ত ভাড়া, চালকের দুর্ব্যবহার, গন্তব্যে যেতে রাজি না হওয়া বা রাজি হয়ে পরে নাকচ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিষ্পত্তিতে আরও কঠোর হওয়া দরকার। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অ্যাপসে জমা পড়া অভিযোগ ও নিষ্পত্তির সংখ্যা জানতে পারে বিআরটিএ। এর বাইরে অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ হিসেবে অ্যাপসের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংস্থাটি।

এদিকে অনুমোদনের অতিরিক্ত গাড়ি চালানোর ব্যপারে ব্যবস্থা নিতে পারে বিআরটিএ। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয় বিআরটিএ। তা ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির বাণিজ্যিক ব্যবহার বোঝার সুবিধার্থে গাড়ির দৃশ্যমান স্থানে ৯৯৯ নম্বর সংবলিত স্টিকার থাকার বিধান রয়েছে; কিন্তু মটরসাইকেল বা কারে এটি দেখা যায় না বললেই চলে। অবশ্য এজন্য কাউকে শাস্তি পেতে হয়েছে বলেও জানা যায় না।

Comment here