কুষ্ঠ নির্মূলে আমাদের করণীয় - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
অন্যান্য

কুষ্ঠ নির্মূলে আমাদের করণীয়

আব্বাস উদ্দিন :

অদ্য ২৩/৩/২০২২ ইং রোজ বুধবার সকাল ৯.০০ ঘটিকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রন ও রিহ্যাবিলিটেশন
প্রকল্প অফিস রাঙামাটি এ এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় গুরুদের নিয়ে কুষ্ঠ সচেতনতা ও করনীয় বিষয়ে এক কর্মশালা
অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার পরশ চাকমা ও প্রকল্প কর্মকর্তাগন এবং ধর্মীয়
অতিথিবৃন্দগন। প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার স্বাগত বক্তব্য বলেন , কুষ্ঠ মানবসভ্যতার একটি প্রাচীনতম রোগ।

প্রায় চার হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে এ রোগের। অদ্যবধি কুষ্ঠ পৃথিবীব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে
বিরাজ করছে। কুষ্ঠ জীবাণুঘটিত রোগ। এই রোগের টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। এটি নির্মূল ও প্রতিরোধের
জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আক্রান্ত দেশসমূহ একযোগে কাজ করছে। ভয়, কুসংস্কার এবং লজ্জার কারণে কুষ্ঠ
রোগে আক্রান্তরা এটিকে প্রকাশ করতে চান না বা চিকিৎসা গ্রহণে কুণ্ঠাবোধ করে থাকেন। কুষ্ঠ সংক্রমণ নিয়ে
অঞ্চলভিত্তিক জরিপে এই রোগটা সব এলাকায় সমানভাবে ছড়ায় না; পার্বত্য অঞ্চল ও নীলফামারীসহ উত্তরবঙ্গের
কিছু হতদরিদ্র এলাকায় বেশি দেখা যায়। অধিক জনসংখ্যা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোগটি ছড়াতে বিশেষ
ভূমিকা রাখে। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৮০টি দেশে এ রোগের বিস্তার রয়েছে। ভারত, নেপাল, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা,
মিসর, সোমালিয়া, লাইবেরিয়া ইত্যাদি দেশে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

বাংলাদেশে প্রতি দশ হাজার জনে ০.৬ জন এ রোগে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে
বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বগুড়া ও ঢাকা জেলায় এর
প্রাদুর্ভাব রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিও সমন্বিতভাবে কাজ করে চলেছে রোগটি
নির্মূলের জন্য। প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন ‘কুসংস্কারই’ কুষ্ঠ চিকিৎসা ও প্রতিরোধে মূল প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।

অথচ সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এটি একটি পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ।  কুষ্ঠ রোগে মূলত প্রান্তিক
স্নায়ু আক্রান্ত হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চামড়ার মাধ্যমে এ রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। জীবাণু সাধারণত ত্বক
এবং ত্বকের নিকটবর্তী স্নায়ুকলাকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত স্থান অপেক্ষাকৃত বিবর্ণ হয়ে থাকে। স্নায়ু আক্রান্ত হলে
স্থানটি অবশ হয়ে থাকে। কুষ্ঠ হলে হাত, পা বিকলাঙ্গ হতে পারে। চোখ নাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ত্বক
শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। সব বয়সীরাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।  রোগী ও সমাজকে সচেতন করার মাধ্যমে
অনেকাংশেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আমাদের দেশে বিনামূল্যে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। অজ্ঞতা
ও কুসংস্কারের কারণে অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরও চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে চায় না। এই রোগ সম্পূর্ণ
নিরাময়যোগ্য। সময়মতো ওষুধ গ্রহণ করলে কোনো জটিলতা হয় না। তবে জটিলতার কারণে শল্য চিকিৎসা ও
ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। কর্মশালা শেষে উম্মক্ত আলোচনা হয়। সকলে অংশগ্রহন করেন।

Comment here