চাকরি দিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ, ফাহিমকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

চাকরি দিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ, ফাহিমকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাকরির দেওয়ার জন্য ইন্টারভিউতে ডেকে এক তরুণীকে গণধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার ফাহিম আহমেদ ফয়েজের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। তবে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ সোমবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে ফের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।

ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান শুনানি শেষে  ফের রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে, আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে একদিন তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ২৯ আগষ্ট এ আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ট) রাজধানীর শ্যামলীতে হেলথ ভিশন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী। পরদিন শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী। এরপরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোরে ওই অফিস থেকে ধর্ষণে জড়িত ফাহিম আহমেদ ফয়েজ নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার এজাহার থেকে জানা জায়, ভুক্তভোগী তরুণী ধানমন্ডির একটি মেসে থেকে শান্তা মরিয়ম ইউনিভার্সিটিতে ফ্যাশন ডিজাইনে পড়াশোনা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্রে এক বছর ধরে নাহিদ পাটোয়ারী নামে এক তরুণের সঙ্গে তার পরিচয়। ২৭ আগষ্ট দুপুর ২টার দিকে নাহিদ ফোন করে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে মেয়েটিকে শ্যামলীর ওই অফিসে ডেকে নেন।

ইন্টারভিউ বোর্ডে তাকে দু-একটি প্রশ্নের পরই সিগারেট আর ওয়াইন অফার করা হয়। না করলে তাকে কোকাকোলা পান করতে দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়েটি জানত না তাতে ঘুমের ওষুধ মেশান ছিল। সেটি পান করার পর মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে ফয়েজ ও নাহিদ তাকে ধর্ষণ করেন। জ্ঞান ফেরার পর হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করে বাসায় ফেরেন ওই তরুণী।

পরদিন ভুক্তভোগী মামলা করলে তদন্তে নামে পুলিশ। জানতে পারে, গ্রেপ্তার ফাহিমের প্রতিষ্ঠানে চাকরির নামে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই হতো না। হেলথ কেয়ার নামে কোথাও কোনো সংস্থা কাজও করে না। এটা শুধু আইওয়াশ। তাদের মূল ব্যবসা বেকার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে প্রতারণা করা।

এ জন্য কয়েকমাস পরপর ফয়েজ ও নাহিদ বাসা বদল করতেন। অন্য জায়গায় গিয়ে অন্য নামে আবার বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে নতুন করে প্রতারণা শুরু করতেন। বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে যারা ইন্টারভিউ দিতে আসতেন, তাদের মধ্যে সহজ-সরল দেখে কয়েকজনকে টার্গেট করতেন নাহিদ ও ফয়েজ। তারপর তাদের উচ্চ বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। আবার চাকরি নিতে আসা অনেক নারীকে তারা টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিতেন। অনেকেই তাদের ফাঁদে পড়লেও লজ্জায় ঘটনা প্রকাশ করেনি।

শ্যামলী ৩নং সড়কের ৩৫/১/বি ভবনের কেয়ারটেকার জানান, পঞ্চম তলার ওই কক্ষটি পরিবার নিয়ে থাকার জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন ফয়েজ। কিন্তু সেখানে তারা থাকার পাশাপাশি অফিসের কার্যক্রমও চালাতেন। তারা হেপাটাইসিস বি টিকা বিক্রি ও বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করেন বলে বাড়ি মালিককে জানিয়েছিলেন।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সী জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ফাহিম ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই নাহিদ ও সে মিলে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে তরুণীদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন। ওই দিন বিকেলে ওই তরুণীকে ধর্ষণের সময় আরও দুজন উপস্থিত ছিলেন।

নাহিদসহ অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ভুক্তভোগী তরুণীকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়। যে গ্লাস দিয়ে তাকে কোকাকোলা পান করানো হয়েছিল সেটি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হেলথ ভিশন নামে যে প্রতিষ্ঠানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটিকে এরই মধ্যে সিলগালা করা হয়েছে।

Comment here