জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দলীয় প্রধান ফেরার পর - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দলীয় প্রধান ফেরার পর

গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে মনোনায়নপত্র বাতিল হওয়া মেয়র পদপ্রার্থী ও করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় টিমের বৈঠকে এ দাবি জানান ছয় নেতা। তারা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। পরে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র আমাদের সময়কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সমন্বয় টিমের বৈঠকে উন্মুক্তভাবে কথা বলতে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈঠকে ছিলেন না। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের সভাপতিত্বে বৈঠকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খান উপস্থিত হন। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বৈঠকের সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘এর আগেও বড় একটা ভুল করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তার পরও ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে আমাদের প্রিয় নেত্রী তার প্রতি কিছুটা সদয় হয়েছেন। জাহাঙ্গীর আলম যে চিঠিতে ক্ষমা চেয়েছিলেন, সেখানে তিনি লিখেছিলেন ভবিষ্যতে আর ভুল করবেন না। আমার প্রশ্ন- আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা গাজীপুর সিটিতে মনোনয়ন ঘোষণার পর জাহাঙ্গীর আলম ফের ঔদ্ধত্য দেখাতে শুরু করলেন। ওই সাহস উনি পান কোথায়? এর পর ওনাকে দলে রাখার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা?’

গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশ না মানার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন। এ বিষয়ে দলের কেন্দ্র থেকে হুশিয়ারি কিংবা ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তা জানতে চান। পর্যায়ক্রমে আরও চার নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। এর মধ্যে একজন ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম এমন সাহস পান কোথায়? নাকি কেন্দ্র থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছেন- তাও খতিয়ে দেখা দরকার।’ সর্বোপরি তারা জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।

ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামানও বৈঠকে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। তার ভাষ্য- ‘জাহাঙ্গীরকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।’

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘মনোনয়নের দিন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিষয়ে কেউ দ্বিমত করেনি। এলাকার রাজনীতিতে এবং ভোটারদের কাছেও আজমত উল্লা খান জনপ্রিয়। সুতরাং দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।’

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে ফর্মাল আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনে কীভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে কথা হয়েছে।’ দলীয় প্রার্থীর বিরোধীদের বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সিদ্ধান্ত হবে বলে আলোচনা হয়।’

পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী ৯ মে দেশে ফেরার পর এসব বিষয় অবহিত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন বৈঠকের সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। এ সময় তিনি বলেন, নেত্রী দেশে নেই, দলের সাধারণ সম্পাদকও উপস্থিত নন। তাই সবার বক্তব্য নোট করে রাখছি। নেত্রী (শেখ হাসিনা) দেশে ফেরার পর এসব বিষয় তার কাছে তুলে ধরা হবে। তিনি সার্বিক বিষয় উপলবদ্ধি করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

অবশ্য বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায় বীরবিক্রম বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে আওয়ামী লীগ মাথা ঘামাচ্ছে না। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিটিংয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করতে চাই। কেউ যাতে আগুন-সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে গাজীপুরের নির্বাচন দেশবাসীর জন্য ও ক্ষমতাসীন দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘গাজীপুরের ভোটারসংখ্যা ১২ লাখের কাছাকাছি। ৯টি থানা, ৪৮০টি কেন্দ্র ও ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে একটা বিশাল এলাকা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে গেলে বিশাল কর্মীবাহিনী দরকার। তাই গাজীপুরে সর্বস্তরের জনগণ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পক্ষের সকল মানুষকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই। ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা জয়লাভ করতে চাই। সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও আগুন-সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে কেউ যেন নির্বাচন বানচাল করতে না পারে সেজন্য কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক মায়া বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য থানাভিত্তিক কমিটি হবে। ভোটকেন্দ্রভিত্তিকও কমিটি হবে। স্তরে স্তরে কমিটিগুলো সাজাব। ৪৮০টির মধ্যে বেশিরভাগ কমিটি হয়ে গেছে। আগামী ৯ তারিখের আগে নির্বাচনের সব কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। প্রত্যেকে যেন ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে চাই। আশা করি নৌকার বিজয় হবে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

এ ছাড়া টিমের সদস্য হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তারানা হালিম, সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, মোহাম্মদ সাইদ খোকন, রেমন্ড আরেং ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৫ এপ্রিল দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় গাজীপুরে নৌকার টিকিট পান অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। তার পক্ষে নির্বাচনী কাজ করতে ২৮ সদস্যদের একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়।

আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তফসিল অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৭ এপ্রিল, বাছাই ৩০ এপ্রিল ও ৮ মের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।

Comment here