ডা. মঈনের মৃত্যুই প্রমাণ করে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

ডা. মঈনের মৃত্যুই প্রমাণ করে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস সংক্রামণের ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘মহাদুযোর্গ’ মোকাবিলায় ‘জাতীয় টাস্ক ফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব করেছে বিএনপি। পাশাপাশি করোনাভাইরাস শনাক্তে টেস্টের পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্ব দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

আজ শুক্রবার বেলা সোয়া ১১ টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের অবস্থান তুলে ধরে এসব কথা বলেন।

ডা. মঈন উদ্দীনকে জাতীয় বীর ঘাষণা করার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার মৃত্যুই প্রমাণ করে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর। আমরা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদর জন্য যথাক্রম ১ কোটি, ৭৫ লক্ষ ও ৫০ লক্ষ টাকার জীবন বীমা ঘোষণার প্রস্তাব করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী পহলা বৈশাখ উপলক্ষে ভাষণে অবশ্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ১০০ কাটি টাকার বিশেষ সম্মানি ভাতা প্রদান এবং তাদেরকে ৫-১০ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বীমা এবং মৃত্যুর কারণে এই বীমার অংক ৫ গুণ বৃদ্ধির ঘাষণা দিয়েছন। আমরা এই নগদ সম্মানি ও বীমার পরিমাণ যথেষ্ট মনে করি না।’

কারোনার এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় অগ্রাধিকার বিষয়গুলো কী হতে পারে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবার আগে এখন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট প্রয়োজন। রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়াটা সবচেয়ে আগে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত অর্থনৈতিক প্যাকেজ একটি শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মনে করে বিএনপি। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্যের সমালোচনা করে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে গত কয়েকদিনে সারা দেশের প্রায় পাঁচ লক্ষ পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।‘

তিনি বলেন, ‘চতুর্দিকে অন্ধকার ও হতাশা। করোনা দুর্যোগের নানামুখী প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হবে বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় এ পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে সুসমন্বিত ও সুবিবেচিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা ও ঋণ প্যাকেজ বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্যে একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব আমরা করছি।’

‘এই টাস্কফোর্সে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, সশ্বস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মধ্যে দিয়ে একটি জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করে এই টাস্ক ফোর্সকে অর্থবহ ও গতিশীল করার মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। আমাদেরকে লড়াই করতে হবে এবং সেই লড়াইয়ে অবশ্যই আমরা জয়ী হতে হবে’, বলেন বিএনপি মহাসচিব।

টাস্কফোর্স গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘টাস্কফোর্স গঠন করলে সুসমন্বিত, সুচিন্তিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। নোভেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায় কোনো খাদ্যের ঘাটতি নয়, খাদ্য বণ্টনে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিদ্ধান্তহীনতা, সুশাসনের অভাব দুর্ভিক্ষের কারণ হতে পারে। তাই এখনই খাদ্য ও ত্রাণ বণ্টনে এবং করোনার পরবর্তী পুনর্বাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘দিন আনে দিন খায়-দিন মজুর তাদেরকে বলা হচ্ছে, ঘরে থাকো। ঘরে থাকলে তো খাওয়া আসছে না। তাদের জন্য ত্রাণ নিশ্চিত করতে উপযুক্ত হচ্ছে সামরিক বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে কাজটা সহজে করা যেতে পারে। অতীতে দুই-একবার এই কাজগুলো হয়েছে তাদেরকে নিয়ে। আমরা কোনো রকমের সংকীর্ণতায় ভুগতে চাই না। আমরা মনে করি যে, এখন জাতীয় ঐক্যটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।’

বিএনপি কোন কাজ করছে না- ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের এমন অভিযোগের কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিষয়টা হচ্ছে, একটা রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে সরকার। সরকারের যদি জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব থাকে না, মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট থাকে না। যার ফলে এটা সরকার উপলব্ধি করছে না যে, এখন যেটা দরকার সবাইকে এক জায়গায় আনা। তাদের মধ্যে একটা ধারণা সৃষ্টি করা যে, আমরা যা কিছু করছি-ঐক্যবদ্ধভাবে করছি। ভারতে দেখুন, সেখাকার প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে কথা-বার্তা বলেছেন সমস্ত বিরোধী দলের সঙ্গে। অন্যান্য রাজ্যের চিফ মিস্টিনারের সঙ্গে উনি কথা বলছেন। আর কথা বলেই কিন্তু তিনি হয়ত তার কাজটাই করছেন। এটা খুবই প্রয়োজন।’

বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে আমরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিফলেট বিতরণ করেছি, তাদেরকে মাস্ক দিয়েছি। দুর্ভাগ্য আমাদের তথ্য মন্ত্রী সেগুলো দেখতে পান না।  আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৪ মার্চ দলের নেতা-কর্মীদেরকে আহ্বান জানিয়েছিলেন যে, নিজেকে নিরাপদ রেখে দুঃস্থ এবং দুদর্শাগ্রস্থ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রত্যেকটা জেলা, উপজেলায় আমাদের দল, সহযোগী সংগঠন, অঙ্গসংগঠনসমূহ তারা কাজ করছে। যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দল, ড্যাব (ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে সর্বক্ষণ। সিলেটের প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা মহানগরীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমাদের দলের নেতা-কর্মী খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। একইভাবে প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলাতে যারা প্রার্থী ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন, এমপি ছিলেন তারা নিজেরাই নিজস্ব উদ্যোগে তাদের এলাকাগুলোতে দুঃস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করেছেন। আমার ধারণা যে, সারা দেশে কমপক্ষে ৫ লক্ষ পরিবারের কাছে আমাদের সাহায্য ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্যাকেজ শুভঙ্করের ফাঁকি

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্যাকেজটি কলেবরে বড় হলেও এটি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি। লোক দেখানো আইওয়াস মাত্র। প্যাকেজটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রণোদনা বলা হলেও মূলত অধিকাংশই ব্যাংক নির্ভর ঋণ-প্যাকেজ যা বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী মহলকে দেওয়া হবে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। এতে সরকারের প্রণোদনা নিতান্তই অপ্রতুল। যেমন গার্মেন্টস মালিকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ, শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের মালিকদের জন্য ৩০ হাজার কোটি ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের মালিকদের জন্য ২০ হাজার কোটি ঋণ, কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি ঋণ, ইডিএফ সম্প্রসারণ ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট ফিন্যান্স স্কীমে ৫ হাজার কোটি ঋণসহ সর্বমোট ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এর মধ্যে সরকারের ভুর্তকি বাবত দেবে ৩ হাজার কোটি টাকা মাত্র। অর্থাৎ ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ প্যাকেজের মধ্যে মূলত সুদ ভুর্তকির ৩ হাজার কোটি টাকাই হচ্ছে সরকারি প্রণোদনা। অবশিষ্ট অর্থ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বাভাবিক ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিতরণ করা করবে। এতে সরকারের খরচ হবে ৩ হাজার কোটি টাকা, বাকি অর্থ আসবে ব্যাংক সূত্র থেকে।

Comment here