তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে হওয়া সাজা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ছয় দিনের সফরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তিনি।

তারেক রহমান এখন যুক্তরাজ্যে, রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। তিনি গ্রেনেড হামলাসহ নানা মামলার আসামি। তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আপনাদের কি কোনো আলোচনা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই। এক সময় তার বিরুদ্ধে যে সাজা দেওয়া হয়েছে সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে বারবার যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা…। একটা অপরাধী, সে ওখানে…। যে অপরাধী হোক, তাদের তো ফিরিয়ে নিয়ে সাজাটা কার্যকর করা উচিত। সে ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে এটা এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্রিটিশ গভর্মেন্টের ওপর। তারা কী সেই আসামি ওখানে রেখে লালন-পালন করবে, না শাস্তিটা কার্যকর করতে দেবে। এটা তাদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করছে।’

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারেরে চেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের তরফ থেকে সেই উদ্যোগটা সব সময় আছে। আমরা তো চাই এত বড় একটা…। একটা হচ্ছে মানিলন্ডারিং কেস, অস্ত্র চোরাকারবারি কেস, দুর্নীতি এবং সেইসঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। এমন বহু মামলা তাদের বিরুদ্ধে রয়ে গেছে। তারেক রহমান তো কেয়ারটেকারের সময় মুচলেকা দিয়ে চলে এসেছিল। তাই আমরা চাই যত দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে এই মামলার রায় কার্যকর করতে।’

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনার চিন্তা-ভাবনা কী আপনাদের আছে?- ভয়েস অব আমেরিকার করা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু বারবার আলোচনা করেছি, ২০২৮ সালের নির্বাচনেও…। কিন্তু আসলে বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যেটি সৃষ্টি করেছে একজন সামরিক শাসক। যে ১৯৭৫ সালে আমার বাবা, মা, ভাই, বোনকে হত্যা করেছে। একজন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন সেনাপ্রধান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে চেয়ারে বসল। বসে হ্যাঁ-না ভোটের নামে নাটক, সেখানে না নয়, সব হ্যাঁ ভোটই হয়ে গেল। পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১৯৭৭ সালে করল। এরপরে গিয়ে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করল, ক্ষমতায় বসে থেকে। এ কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে, অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় বসে থেকে যে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা হয়েছে সেটাই হচ্ছে বিএনপি।’

 

তিনি বলেন, ‘আলোচনার কথা যদি বলেন…। দেখুন, আমার মা-বাবা-ভাইদের যারা হত্যা করেছে সেই হত্যাকারীদের বিচার আমি কোনো দিন চাইতে পারিনি। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে মামলা করতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে যখন মামলা করলাম, যেদিন রায় দেবেন সেদিন হরতাল ডেকেছে বিএনপি। যাতে জজ সাহেব কোর্টে গিয়ে রায় দিতে না পারেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষমতায় ছিল আবার আমার বাবা-মা ও ভাইদের হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী। তারপরও দেশের স্বার্থে, দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে আমি কিন্তু তাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তারা… বলতে গেলে। সিট বিক্রি করা…।  একেকটা সিটের পেছনে দুজন-তিনজনকে নমিনেশন। একজনকে লন্ডন থেকে পাঠায়, আর ঢাকা থেকে কেউ দেয়। এভাবে একেক সিটে দুই-তিন করে ক্যান্ডিডেট। তারা দেখল ইলেকশন করার আর অবস্থা নেই, তখন তারা এক সময় ইলেকশন থেকে ইউথড্র করে চলে যায়। ইলেকশনটাকে তারা কন্ট্রোভার্সিয়াল করার চেষ্টা করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকারের ব্যবস্থা বিএনপিই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। খালেদা জিয়া নিজেই বলেন, পাগল আর শিশু ছাড়া নিরপেক্ষ কেই নেই। সেখানে তারা কীভাবে এই দাবি করেন? সেটাই হলো বড় প্রশ্ন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় একটা প্রশ্ন হলো…। তাদের সঙ্গে ডায়লগ, আমি ডায়লগ কীভাবে করব? ঠিক আছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরও কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি জানি, সে বিচারও কিন্তু তারা করেনি। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা গেছে, লাশ এসেছে। আমি কিন্তু প্রাইম মিনিস্টার। তবুও গেলাম সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি জানাতে। আমি যখন রওনা হয়েছি তখন জানানো হলো ওই বাড়িতে (খালেদা জিয়ার বাড়ি) ঢুকতে দেবে না। মেইন গেট বন্ধ।’

তিনি বলেন, ‘আমি তখন বললাম, এসেই যখন পড়েছি মেইন গেট না হয় না খুলল যেটা পকেট গেট আছে সেখান দিয়েই যাব। আমাকে এসএসএফ নিতে আসছে। যেই গাড়ি থেকে নামব, পেছন থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিল। আমাকে ঢুকতে দিল না। আমাকে না ঢুকতে দিয়ে চরম অপমান করা হলো। আপনারা বলেন, এরপর কার সঙ্গে ডায়লগ করব আমি?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একে তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারপর আবার বাবা-মা, ভাই-বোনদের খুনি, যুদ্ধাপরাধী। তারপরও দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য কিন্তু অনেক উদারতা দেখিয়েছি। তবে এখন আর তাদের সঙ্গে কথা বলার কিছু নেই। কারণ তাদের যে অপরাধ। আমার ২১ হাজার নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করার পর। সেসব মানুষ মারা গেছে, তাদের পরিবারগুলো যে কষ্ট পাচ্ছে। যারা পুড়েও বেঁচে আছে, তাদের সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করেছি। যে অবস্থায় তারা আছে তা কেউ দেখলে…। পোড়া মানুষগুলোর কষ্ট দেখলে আর ওদের (বিএনপির) সঙ্গে বসতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয়, ওদের সঙ্গে বসলে আমি পোড়া মানুষগুলোর গন্ধ পাই।’

Comment here