তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সকল জল্পনা কল্পনার অবসান - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সকল জল্পনা কল্পনার অবসান

বান্দরবানে ক্যশৈহ্লাকে বহাল রেখে খাগড়াছড়িতে নতুন চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ও রাঙ্গামাটিতে অং সুই প্রু চৌধুরী

 

তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্ভাব্য পরিবর্তনের আলোচনা আর জল্পনা কল্পনা শেষ পর্যন্ত অবসান হয়েছে পার্বত্য
জনপদে। বুধবার দুপুর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছিলো নানান হিসেব নিকেশ। সম্ভাব্য নানান
জনকে চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন নানান শ্রেণীর
মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা।

আর এইসব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বান্দরবানে টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান
ও পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের স্ত্রীর ভাই ক্য শৈ হ্লা, খাগড়াছড়িতে কংজরী চৌধুরীর পরিবর্তে খাগড়াছড়িতে
সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ভাতিজি জামাই সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও বর্তমান জেলা কমিটির যুগ্ম
সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমাকে সরিয়ে
নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হলো রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য হিসেবে টানা দু’মেয়াদে দায়িত্ব
পালন করা কাউখালীর আওয়ামীলীগ নেতা অং সুই প্রু চৌধুরীকে।

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ সচিব সজল কান্তি বণিক স্বাক্ষরিত এক পত্রে
এই তথ্য জানা যায়।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ১৪ সদস্যের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছে, সবির কুমার চাকমা (বরকল), প্রিয় নন্দ
চাকমা (বাঘাইছড়ি), প্রবর্তক চাকমা (জুরাছড়ি), ইলিপন চাকমা (নানিয়ারচর) , হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর
(সদর), মোঃ আব্দুর রহিম (লংগদু), বাদল চন্দ্র দে (সদর), অংসুই ছাইন চৌধুরী (কাপ্তাই), নিউচিং মারমা
(রাজস্থলী), ঝর্ণা খীসা (সদর), মোছাঃ আছমা বেগম (লংগদু), বিপুল ত্রিপুরা (সদর), দিপ্তীময় তালুকদার
(কাপ্তাই), রেমলিয়ানা পাংখোয়া (বিলাইছড়ি)।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ১৪ সদস্যের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছে, নির্মলেন্দু চৌধুরী (সদর), মোঃ আব্দুল
জব্বার (মানিকছড়ি), মোঃ মাঈন উদ্দিন (মানিকছড়ি), পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল (সদর), খোকনেশ্বর ত্রিপুরা (সদর),
হিরণ জয় ত্রিপুরা (মাটিরাঙ্গা), আশুতোষ চাকমা (দীঘিনালা), শুভ মঙ্গল চাকমা (সদর), নীলোৎপল খীসা
(মাইসছড়ি), মংক্যাছিং চৌধুরী (সদর), রেম্রাচাই চৌধুরী (লক্ষ্মীছড়ি), মেমং মারমা (গুইমারা), শতরুপা চাকমা
(দীঘিনালা), শাহিনা আক্তার (মানিকছড়ি)।

পরিষদের ১৪ সদস্যের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছে জেলা সদরের ক্যাসা প্রু, থানচি উপজেলার শৈহ্লাচিং বাশৈচিং মার্মা,
আলীকদম উপজেলার দুংড়ি মং মার্মা, রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে কাঞ্চনজয় তংচঙ্গ্যা, সদর উপজেলা থেকে সিং
ইয়ং ম্রো, জেলা শহর থেকে সত্যহা পানজি ত্রিপুরা, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে ক্যনে ওয়ান চাক, রুমা উপজেলা

থেকে জুয়েল বম, পৌর এলাকা থেকে লক্ষীপদ দাশ, ও মোজাম্মেল হক বাহাদুর, লামা উপজেলা থেকে শেখ
মাহাবুবর রহমান, রোয়াংছড়ি থেকে সিংঅং খুমী, পৌর এলাকা থেকে মিজ তিংতিং ম্যা ও লামা উপজেলা থেকে
ফাতেমা পারুল। সদস্যদের মধ্যে নতুন মুখ মাত্র ৪ জন।
সুত্রে জানা যায়, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬১ জেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের
নির্বাচন না হয়ে ফের পূর্নঃগঠন হলো তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ। আইন অনুযায়ী জনগনের ভোটে তিন পার্বত্য
জেলা পরিষদ গঠন হওয়ার কথা থাকলে বিগত বিভিন্ন সরকারের সময় থেকে সরকার দলীয় লোক মনোনয়ন
দিয়ে পূর্নঃগঠন হয়ে আসছে পার্বত্য জেলা পরিষদ, এবারও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রথম ও
শেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন। এরপর আর নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নির্বাচন
অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনগণের দাবি থাকলেও সরকার তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে দলীয় লোক মনোনয়ন দিয়ে
পরিচালনা করছে।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির আইনে বলা আছে, পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে প্রণীত পৃথক
ভোটার তালিকায় ৩ পার্বত্য জেলায় পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জনগণের প্রত্যক্ষ
ভোটে ১ জন চেয়ারম্যান এবং ৩৩ জন সদস্য নির্বাচিত হবে।
আইনে আরো বলা আছে, প্রত্যেক পরিষদে সংশ্লিষ্ট জেলার জনগণের ভোটে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের মধ্য থেকে ১ জন
চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্য, অ-উপজাতি ১০ জন এবং সংরক্ষিত তিনটি মহিলা আসনে ২ জন উপজাতি ও ১
জন অ-উপজাতি সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। কিন্তু গত ৩০ বছর
ধরে নির্বাচন না হওয়ায় পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোত জনগণের অংশগ্রহন নিশ্চিত হয়নি।
১৯৯৬ সালের ৫ আগস্ট নির্বাচিত তিনটি পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রত্যেক পরিষদে ১ জন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্য
মনোনয়ন দিয়ে অর্ন্তবতীকালীন পরিষদ গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর
স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তির শর্তে ১৯৯৮ সালে আইন সংশোধন করে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ
থেকে ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ নামে সংশোধিত হয়। এরপর আর নির্বাচন দেয়নি সরকার। সর্বশেষ ২০১৫ সালের
২৫ মার্চ পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ১ জন চেয়ারম্যানসহ সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ১৫-তে উন্নীত করে তিন
পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করে সরকার।

সূত্র জানায়, তিন পরিষদের সদস্য পদের ৪৫টি পদের মধ্যে বান্দরবানে পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য থোয়াই হ্লা মং
ও মোস্তফা জামাল জেলার থানচি ও লামা উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কারনে অন্যদিকে
রাঙ্গামাটিতে চান মনি তংচঙ্গ্যা, জানে আলম ২ জনের মৃত্যু জনিত কারন, অন্য ১ সদস্যকে বাদ দেওয়াসহ মোট
৫টিসহ আরো কয়েকটি পদে নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়ে পূর্নঃগঠন হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ।
এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর তিন পার্বত্য জেলা
পরিষদ থেকে পরিষদ পূনঃর্গঠনের জন্য সূপারিশ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় আর এই
তালিকার পরে পার্বত্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠালে প্রধানমন্ত্রী গত ৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার অনুমোদন
প্রদান করেন, আর ১০ ডিসেম্বর এই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এদিকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নির্বাচন না হওয়ায় দলীয় লোকজন লাভবান হলেও বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ
মানুষ। এসব জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোরালো দাবি জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ
স্থানীয়রা।

Comment here