প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে জনগণ ভরসা রাখতে পারছে না : ফখরুল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে জনগণ ভরসা রাখতে পারছে না : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের প্রতি জনগণ ভরসা রাখতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সরকারের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বক্তব্যের মধ্যে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে আশা রাখতে বলেছেন, ভরসা রাখতে বলেছেনÑ সেই ভরসা মানুষ কোত্থেকে রাখবে। অর্থনীতি চরমভাবে নিচে নেমে গেছে। তার ভাষণের মধ্যে অর্থনীতির যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, বাস্তবে ঠিক উল্টোটা। সবগুলো ব্যাংক ভেঙে পড়ছে। মানুষ আস্থা রাখবে কোথায়?’

একজন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষের আয় কমে যাচ্ছে, ব্যয় বাড়ছে, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এমন একটা জিনিস নেই, যার দাম বাড়েনি। সে ক্ষেত্রে আজকে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দুর্নীতি-দুঃশাসনের রোল হচ্ছে বাংলাদেশ।’

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ বক্তব্যটা ওনাদের নিজেদের জন্য। ওনার নিজের একটা আত্মতুষ্টি দেওয়ার জন্য। ওনারা জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন, জনগণের মনের ভাষা বুঝতে

পারছেন না, জনগণের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন নাÑ এ বক্তব্যটা তারই প্রমাণ।’

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে জাতি হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। বর্তমান রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সংকট চলছে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে এটা রাজনৈতিক সংকট। একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে বসে আছে এবং সেটা একটা নির্বাচন, যে নির্বাচন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর হয়নিÑ তা ২৯ ডিসেম্বর রাতে ডাকাতি হয়ে গেছে। জাতির প্রত্যাশা ছিল, উনি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী সে কারণে উনি এ সংকট নিরসনের একটা পথ তার বক্তব্যের মধ্যে রাখবেন, এ নির্বাচনকে বাতিল করে দিয়ে তিনি একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নতুন নির্বাচনের কথা বা তার একটা ইঙ্গিত তিনি দেবেন বা সংলাপের একটা ইঙ্গিত দেবেন। কোনোটাই তিনি করেননি। অর্থাৎ সেই সংকটটা নিরসনের জন্য তিনি কোনোই পথ দেখাননি।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খ-ন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্যদিকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কতগুলো বক্তব্য রেখেছেন, বক্তব্যগুলো সত্য নয়। যেমন তিনি বলেছিলেন, ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দেশের মানুষ জরাজীর্ণ ছিল, কঙ্কালসার দেহ ছিল। এটা সম্পূর্ণ উল্টো। তার আগে ১৯৭২-৭৫ এ দেশে একটা চরম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার কারণে, দুঃশাসনের কারণে। আপনাদের মনে আছে, ওই সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, এই দেশটা একটা বটমলেস বাস্কেট। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে এ অবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটে এবং একটা বটমলেস বাস্কেট থেকে একটা পাটি পটেনশিয়াল ইকোনমিতে পরিণত হয় বাংলাদেশ।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের যে বাংলাদেশের অর্থনীতি, তার ভিত্তিটাই রচনা করেন জিয়াউর রহমান। যেখানে ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল ছিল, সেখানে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন এবং মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গার্মেন্টস সেক্টর এবং রেমিট্যান্সÑ এ দুটিই জিয়াউর রহমান শুরু করেন। এ কথাগুলো এখানে আসেনি বরং সত্যের অপলাপ করা হয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘দোষারোপ করা হয়েছে, বিএনপি সন্ত্রাস করেছে। ভুলে গেছেন ওনারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছেন কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে। সেই সময়ে বাসে ১১ ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে এবং এ আন্দোলনের ফলে অনেকে নিহত হয়েছেন। সেই যে রাজনৈতিক কালচারটা ছিল, এখনো সেই কালচারটা আছেÑ তারা করছেন, সরকার করছেন। তারা হত্যা করছে, তারা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করছে, তারা তুলে নিয়ে গিয়ে মারাছে, গুম হচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেÑ এ জিনিসগুলো তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্যের মধ্যে আসেনি।’

Comment here