বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির অনুমতি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়ে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চালের বর্তমান আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

আজ রোববার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চালের দাম নিয়ে ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয়, আবার কৃষকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘কেবল বৈধ আমদানিকারকরা ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আমদানির আবেদন করবেন। সেখান থেকে মন্ত্রণালয় কাকে কী পরিমাণ আমদানি করতে দেবে সেই সিদ্ধান্ত জানাবে। অনুমোদন পাওয়ার পর কে কী পরিমাণ আমদানি করেছে সেই হিসাবও রাখা হবে।’

দেশের বাজারে চিকন চালের দাম এখন প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) ৩২০০ টাকা থেকে ৩৪০০ টাকার মধ্যে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। খুচরায় প্রতিকেজি সরু চালের দাম পড়ছে ৬৪ টাকা থেকে ৬৬ টাকার মধ্যে। সরু চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঝারি ও মোটা চালের দামও বেড়েছে।

চালের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চালের দাম কেন এত বাড়বে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। ৩২-৩৩ টাকার মোটা চাল ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারণগুলো কী?’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গত ২৩ ডিসেম্বরের যে তথ্য দেওয়া আছে, তাতে সরকারি গুদামগুলোতে মোট ৭ দশমিক ৪৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল ৫ দশমিক ৪২ লাখ মেট্রিক টন এবং গম ২ দশমিক ৪ লাখ মেট্রিক টন। চালের মজুদের এই পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। এই পরিস্থিতিতে ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, রেশনসহ অন্যান্য সরকারি প্রয়োজনে দরপত্র ও জিটুজি ভিত্তিতে চাল আমদানি করছে সরকার।

ইতোমধ্যে ভারতের বাজার থেকে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে এক লাখ টন চাল আমদানি শুরু করেছে সরকার। সর্বমোট চার লাখ টন চাল সরকারিভাবে আমদানির দরপত্র সচল হয়েছে বলে সাংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি মণ ১০৪০ টাকা করে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য বাজার উন্মুক্ত রেখেছি। কিন্তু বাজারে এখন ধানের দাম ১২০০ টাকা। কৃষক সরকারের কাছে না বিক্রি করে বেশি দামে অন্যত্র বিক্রি করছে।’

এ বছর সরকার ৩৭ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে। কিন্তু খোলা বাজারে কৃষক আরও ভালো দাম পাওয়ায় ওই দামে ধান কিংবা চাল কিনতে পারেনি সরকার। চুক্তিবদ্ধ মিলাররাও লোকসানের কথা বলে চাল সরবরাহ থেকে বিরত থেকেছে।

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও হুমকির কাছে মাথা নত করব না। তাদের হুমকি নিয়ে তারা থাকুক। সময় সুযোগ হলে কৃষকের কাছ থেকে ১৫/২০ লাখ টন ধান কিনে বাজার নিয়ন্ত্রণ করব।’

বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হলেও তা আগামী বোরো মৌসুমের আগেই থামিয়ে দেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমদানি প্রক্রিয়াটা হবে অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত। আগামী বোরোর সিজনের আগ পর্যন্ত যা প্রয়োজন তাই অনুমোদন দেওয়া হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ১৯ হাজার ৭৩৪টি চালকল বা চাতাল রয়েছে। প্রতিটি চাতালে ৫০০ থেকে এক হাজার বস্তা চালের মজুদ থাকে। ছোট ছোট মুদি দোকানগুলোতেও ৫/১০ বস্তা চাল মজুদ থাকে। সেই হিসাবে দেশে এখনও (সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে) ৩০ লাখ টন চাল মজুদ রয়েছে বলে আমরা হিসাব করছি। কিন্তু বাজার স্বাভাবিক রাখার জন্য আরও প্রয়োজন।’

 

Comment here