মিরপুরে আরও এক মৃত্যু : উপসর্গ দেখেও পরীক্ষায় অনীহা চিকিৎসকদের - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

মিরপুরে আরও এক মৃত্যু : উপসর্গ দেখেও পরীক্ষায় অনীহা চিকিৎসকদের

আহমদুল হাসান আসিক : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় যে দুজন মারা গেছেন তাদের একজন মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা। অবসরপ্রাপ্ত এ ব্যাংক কর্মকর্তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তার পরিবারের কেউ বিদেশে থাকেন না। তিনিও কোনো বিদেশ ফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেননি বলে দাবি পরিবারের। কেননা ওই বৃদ্ধ বাড়ির বাইরে তেমন বের হতেন না। বাসার পাশের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেই কেবল যতটুকু বের হওয়া। এর মধ্যেই এক সপ্তাহ আগে তার শরীরে করোনার লক্ষণ দেখা দেওয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার কোনো পরীক্ষা না করেই চিকিৎসকরা বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেন বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। এমনকি দ্বিতীয় দফায় অবস্থার অবনতি হওয়ার পরও তারা পরীক্ষা করতে চাইছিলেন না।

এ বিষয়ে সাবেক ওই ব্যাংক কর্মকর্তার বড় ছেলে আমাদের সময়কে জানান, গত ২৬ মার্চ তার বাবার করোনার লক্ষণ দেখা দেওয়ায় পরদিন কুর্মিটোলায় নিয়ে যান। তখন ওই বৃদ্ধার হেঁচকি অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই চিকিৎসকরা তাকে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেন। পরে অবস্থা খারাপ হলে ২৮ মার্চ পল্লবীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা ধারণা করেন, তিনি হয়তো কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু কুর্মিটোলা থেকে তাকে ফেরত দেওয়া হয় জানালে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেনÑ তা হলে আরও দুয়েকদিন দেখেন।

গত মঙ্গলবার বৃদ্ধের অবস্থার অবনতি হলে আবারও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা প্রথমে তাকে ভর্তি করাতে রাজি হননি। পরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চিকিৎসকদের রেফারেন্স দেখালে ভর্তি নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। শুক্রবার পরীক্ষার ফলে দেখা যায় করোনা পজেটিভ। সেদিনই অবশ্য তিনি মারা যান। পরে সন্ধ্যায় তালতলা কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়। মৃতের ছেলের ভাষ্য, ‘আমাদের বাসায় বিদেশ ফেরত কেউ আসা তো দূরের কথা, পরিবারের কেউও বিদেশে থাকেন না। অবসরের পর বাবাও সারাদিন বাসায় থাকতেন। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য পাশের মসজিদে যেতেন। মিরপুর-১১ নম্বরে অবস্থিত মসজিদুত তাইয়্যিবার সঙ্গেই একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা রয়েছে। মসজিদ বা রাস্তার কারও সংস্পর্শে গিয়েই হয়তো তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ। তবে পরিবারের সবাই ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বরে থাকি। বাবা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১১ সালে তার হার্টে রিং পরানো হয়।’ ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর থেকে বাড়ির সবাইকেই বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

শুধু সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তাই নন, এর আগে মিরপুরের টোলারবাগে আরও দুজন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারাও স্থানীয় মসজিদ থেকে আক্রান্ত হন বলে ধারণা করা হয়। ওই দুটি পরিবারেরও অভিযোগ ছিল, করোনা সন্দেহ করা হলেও শত চেষ্টায়ও তারা সময়মতো পরীক্ষা করাতে পারেননি। একেবারে শেষ সময়ে পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে তাদের আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

এদিকে মিরপুরে করোনায় এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা খোঁজার চেষ্টা করছেন, তারা কীভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গতকাল নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের মাধ্যমে প্রথমে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আমরা দেখেছি যে ওই সদস্যদের সঙ্গেও যারা ওঠবস করেন তারাও সংক্রমিত হয়েছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে অবশ্যই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা যায়। তবে আমাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা কিন্তু এখনো অনেক বেশি নয়। আমরা পরিস্থিতি এখনো বুঝিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা অবশ্যই বলতে পারিÑ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। তবে এটা সীমিত আকারে।’

Comment here