যাত্রী আছে আগের মতোই, ভাড়া বেড়েছে ১শ গুণ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

যাত্রী আছে আগের মতোই, ভাড়া বেড়েছে ১শ গুণ

তাওহীদুল ইসলাম : টানা ৬৬ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার খেসারত দিচ্ছে জনসাধারণ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৬০ ভাগ বাড়তি ভাড়া আদায়ের শর্তে রাস্তায় নামে বাস-মিনিবাস। কথা ছিল মোট আসনের অর্ধেক ফাঁকা থাকবে। ১ জুন থেকে বাস চলতে শুরু করলে প্রথম দুদিন যাত্রীর অভাবে আসন ফাঁকা দেখা যায়। তখন বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যান চলাচল করছে। বাস্তবতা ভিন্ন। গাড়িতে যাত্রী বাড়ছে, ভাড়াও বাড়ছে। এমনকি দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে করোনাকালে। আর ভাড়া, তা ৬০ ভাগ থেকে বেড়ে ১০০ ভাগে পৌঁছে গেছে।

ভারতে করোনার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে দাবি তোলে পরিবহন মালিকরা। কিন্তু সেই প্রস্তাব না মেনে আগের হারেই ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। এবং তা মানতে বাধ্য হচ্ছেন সে দেশের পরিবহনকর্মীরা। এর বিপরীতে আমাদের রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহনে ভিন্ন চিত্র। মানুষ তোলা হচ্ছে আগের মতো এবং ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ হারে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আসছে বলে স্বীকার করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে তিনি পরিবহন মালিকদের অনুরোধ করেন এবং বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। তবে গতকাল পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

 

গত বৃহস্পতিবার ৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় রাজধানীজুড়ে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে কিছু শাস্তির খবর দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধের কারণে যাত্রী ছিল কম। কিন্তু ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ হারেই। ১০ টাকার ভাড়া এবং ১৫ টাকার ভাড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা আদায়ের অভিযোগ আসছে শুরুর দিন থেকেই।

বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান আমাদের সময়কে বলেন, যারা নিম্নবিত্ত মানুষ তাদের বাসে চড়া কঠিন হয়ে গেল। বাড়তি ভাড়ার চাপ নেওয়া তাদের জন্য কঠিন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলে, পরিবহন খাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শুরু হয়ে গেছে। অতীতের মতো এবারও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবারই কিছু অভিযান চলে। এসব অভিযানের মধ্য দিয়ে পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হয়নি কখনো। অথচ ভাড়া বাড়ানোর সময় যাত্রী প্রতিনিধি রাখা হয়নি। পরিবহন মালিকদের প্রস্তাবের চূড়ান্ত রূপ পায় ভাড়া বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।

করোনা পরিস্থিতিতে গণপরিবহনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ১১টি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়। বলা হয়, বাস টার্মিনালে কোনোভাবেই ভিড় করা যাবে না। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রীরা গাড়ির জন্য লাইনে দাঁড়াবেন এবং টিকিট কাটবেন। স্টেশনে পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাসে কোনো যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না। বাসের সব সিটে যাত্রী নেওয়া যাবে না। ৫০ শতাংশ সিট খালি রাখতে হবে। পরিবারের সদস্য হলে পাশের সিটে বসানো যাবে অন্যথায় নয়। যাত্রী, চালক, সহকারী, কাউন্টারের কর্মী সবার জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক। ট্রিপের শুরুতে এবং শেষে বাধ্যতামূলকভাবে গাড়ির অভ্যন্তরভাগসহ পুরো গাড়িতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। যাত্রী ওঠানামার সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। চালক, কন্ডাক্টরদের ডিউটি একটানা দেওয়া যাবে না। তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোয়ারেন্টিন বা রেস্ট দিতে হবে।

টিকিট কাটার সময় দূরত্ব বজায় দূরের কথা রাজধানীর বিভিন্ন স্টপেজে ধাক্কাধাক্কি করে যাত্রী তুলতে দেখা যাচ্ছে। ৫০ ভাগ আসন ফাঁকা রাখার বিধানও এখন মানা হচ্ছে না। যাত্রীর চাহিদা বাড়ছে, ভাড়ার হার বাড়ছে। মাস কয়েক আগেও যে বাসগুলো লোকাল হিসেবে চলত তার ভাড়াও এখন বিলাসবহুল বাসের প্রায় সমান। এসব বাসের ভাড়া কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে আছেন গরিব যাত্রীরা। ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব ৩৮৭ কিলোমিটার। ৪০ আসনের বাসে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া ৭০০ টাকা। সঙ্গে টোলের ৩১ যোগের পর ভাড়া নেওয়া হতো ৭৩০ টাকা। ‘হানিফ’সহ নামিদামি পরিবহনগুলো এ ভাড়াই নিত এতদিন। করোনাকালে ভাড়া বেড়ে হয়েছে এক হাজার ১৫০ টাকা। এতদিন নামহীন ৫১ আসনের লোকাল বাসগুলো ঢাকা-দিনাজপুর রুটে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া নিত। যদিও সরকার নির্ধারিত ভাড়া ছিল কমপক্ষে ৫৮০ টাকা। করোনাকালে এ ভাড়া বেড়ে হয়েছে ৯১০ টাকা! প্রায় তিন গুণ ভাড়া বেড়ে গেছে। ছোট লোকাল পরিবহনগুলো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিলেও এসব বাসের গরিব যাত্রীদের ঘরে ফেরার খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য জেলার ভাড়ার ক্ষেত্রেও।

মহাখালী টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহগামী সাধারণ পরিবহনগুলোর ৫১ আসনের বাস সাধারণ সময়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়া নিত। বাসগুলো লোকাল হিসেবে চলত। দাঁড়িয়ে, বনেটে যাত্রী নিত। সেসব ‘সৌখিন’ ‘রাজীব’ ‘আলম এশিয়া’ পরিবহনের বাসগুলো এখন ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের কাঁধে বাড়তি ভাড়ার চাপ। করোনায় স্বাভাবিক উপার্জনে হিমশিম খাওয়া মানুষগুলো বাড়তি ভাড়ার চাপে কোণঠাসা। পরিবহনকর্মীদের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে যাত্রীদের বিষয় বিবেচনা করার মতো এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিআরটিএ। পরিবহন মালিকদের সংগঠন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙা বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট বাস মালিক ও গাড়ির বিরুদ্ধে।

Comment here