রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার দাফন, প্রত্যাহার ২ পুলিশ কর্মকর্তা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার দাফন, প্রত্যাহার ২ পুলিশ কর্মকর্তা

হারুন অর রশিদ,মনোহরদী (নরসিংদী) : নরসিংদীর মনোহরদী থানা পুলিশের দায়িত্বে অবহেলায় আবুল হাসেম (৭৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মনোহরদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বজলুর রহমানকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জাকির হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জানাজার আগে পুলিশ উপস্থিত না থাকাটা দুঃখজনক। এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা; এসআই মাসুদ রানা ও এএসআই বজলুর রহমানকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

আবুল হাসেম মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য এবং পশ্বিম চরমান্দালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশের এমন ‘কাণ্ডে’ মৃতের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

আবুল হাসেমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। রোবাবার বিকেল ৪টায় তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। মৃত্যুর পর চরমান্দালিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. শহিদুল্লাহ উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেন। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরদিন সকাল ১১টায় তার জানাজা নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয়।

তারা আরও জানান, সোমবার সকাল ১১টার আগেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে একজন কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার জন্য উপস্থিত থাকলেও ঘটনাস্থলে পুলিশ আসেনি। নির্ধারিত সময় ১১টার পর আধাঘণ্টা অপেক্ষা করলেও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত না হওয়ায় মুসল্লিরা ক্ষুব্দ হয়ে ১১টা ৩৩ মিনিটে ওই মুক্তিযোদ্ধার জানাজা পড়িয়ে তাকে লাশ দাফন করেন। এরপর সেখানে পুলিশ উপস্থিত হলে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবাসী পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।

মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের ছেলে পুলিশ সদর দপ্তরের কনস্টেবল কামরুল ইসলাম বাবুল দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর উপজেলা প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো হলে জানাজার জন্য তাদের নির্ধারণ করে দেওয়া সময়মতো আত্মীয়-স্বজন, মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবাসী উপস্থিত হন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ৩৩ মিনিট পরেও পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ না আসায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া বাবাকে দাফন করা হয়েছে।’

চরমান্দালিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আবুল হাসেমের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরই আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। জানাজার নির্ধারিত সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা এবং এলাকাবাসী উপস্থিত থাকলেও পুলিশের কোনো লোকজন উপস্থিত না থাকায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই লাশ দাফন করতে হয়েছে।

মনোহরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মতিউর রহমান তারা দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি জানাজায় গিয়ে পুলিশের উপস্থিতি না পেয়ে বারবার থানায় যোগাযোগ করেছি এবং তাদের জন্য নির্ধারিত সময়ের পরও আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পুলিশের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার সামিল।’

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নরসিংদী থেকে বাঁশিবাদক আসতে দেরি করায় পুলিশ যথাসময়ে জানাজায় উপস্থিত হতে পারেনি।’

মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাফিয়া আক্তার শিমু বলেন, ‘বিজয়ের মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ বেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে না পারা খুবই দুঃখজনক।’

প্রসঙ্গত, আবুল হাসেম মনোহরদী উপজেলার তালিকাভুক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।

Comment here