রেলে অপচয়ের আয়োজন - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

রেলে অপচয়ের আয়োজন

তাওহীদুল ইসলাম : বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের জন্য বগিফ্রেম কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। ট্রেনের যে অংশের ওপর কোচ রাখা হয়, সেটিই বগিফ্রেম। নতুন কোচ কেনার প্রকল্পে অতিরিক্ত বগিফ্রেম থাকে। তা ছাড়া বগিফ্রেমের কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তা মেরামতই যথেষ্ট। এ জন্য নতুন করে কেনার প্রয়োজন না থাকলেও প্রায় ৫ কোটি টাকায় ৩০টি বগিফ্রেম কেনা হচ্ছে।
এ জন্য দরপত্র আহ্বান করলে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। ওই প্রতিষ্ঠানটিই রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অথচ মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওই দরপত্রে অংশ নেওয়ার খবরই জানতে পারেনি। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কেনার উদ্যোগটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। লোকসানি সংস্থা রেলের এই বগিফ্রেম কেনার অর্থকে গচ্চা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অপ্রয়োজনে এ রকম কেনাকাটার মাধ্যমে কমিশনের টাকা রেলের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার পকেটে যাওয়ার সুযোগ বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। বিষয়টি নজরে এসেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়েরও। তারাও খতিয়ে দেখছে এসব বগিফ্রেম কেনার যৌক্তিকতা।
এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) মঞ্জুর উল আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করা হয়। তাদের দুজনের কেউ-ই কথা বলতে রাজি হননি। বগিফ্রেম কেনায় তাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।

জানা গেছে, গত বছরের ২৬ নভেম্বর ট্রেনের জন্য ৩০টি বগিফ্রেম কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র খেলার তারিখ পরিবর্তন হয় দুই দফা। এর পর চলতি বছরের ৫ মার্চ দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়। দেখা যায়, একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান মেসার্স পিটি ইনকা, ইন্দোনেশিয়া দরপ্রস্তাব দেয়। এদের স্থানীয় এজেন্ট মেসার্স বিশ্বাস কনস্ট্রাকশন। এই পিটি ইনকা তথা বিশ্বাস কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে কেনা ২০০ কোচ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠানকেই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ বিবেচনা করা হয়। এতে খরচ ধরা হয় ৪ কোটি ২৭ লাখ ৭৬ হাজার ১১৭ টাকা। তবে সিডি ভ্যাটসহ আনুষঙ্গিক মিলে এতে খরচ পড়বে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এই বগিফ্রেমের মূল প্রতিষ্ঠান জার্মানির বোম্বারডিয়ার। পিটি ইনকার মাধ্যমে নিম্নমানের বগি কেনার ঘটনার পরও একই প্রতিষ্ঠান ও লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে এসব মালামাল কেনার উদ্যোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তার চেয়ে বড় কথাÑ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী

 

কোচ মেরামতে আপাতত এসব বগিফ্রেমের কোনো দরকার নেই। শুধু পছন্দের প্রতিষ্ঠান তথা লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে কাজটি দিতেই এ প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়। সীমিত রাজস্ব বাজেট থেকে এসব অর্থ ব্যয় করে অন্য স্পেয়ার পার্টস কেনায় অর্থসংকট দেখা দিতে পারে। রেলের ইঞ্জিন-কোচ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আছে। এর মধ্যে দরকারি যন্ত্রাংশ কেনার পরিবর্তে অপ্রয়োজনে কেনাকাটার চিন্তাকে অনিয়মের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে রেলের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেনাকাটার নামে দুর্নীতির অভিযোগ পুরনো।

সূত্রমতে, ১৯৯৮ সালে ৬৬টি যাত্রীবাহী কোচ কেনা হয়। ইরান থেকে কেনা এসব কোচে জার্মানির বোম্বারডিয়ার কোম্পানি থেকে বগিফ্রেম ব্যবহার করা হয়। এর পর চীন থেকে ২০০৬ সালে আনা ৫০টি কোচ, ২০০৭ সালে ৩০ কোচ, ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০১৬ সালে ১০০ এবং সর্বশেষ ২০০ কোচ কেনাকালেও বগিফ্রেম আমদানি করা হয়। এ পর্যন্ত ৪৪৬ ট্রেনে ৮৯২টি বগি ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি লটে কিছু স্পেয়ার বগিফ্রেম থাকে। তদুপরি নতুন করে একক ঠিকাদারের মাধ্যমে বগিফ্রেম কেনার উদ্যোগকে গচ্চা হিসেবে দেখছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

 

Comment here