লোডশেডিংয়ের শিডিউল মানা হচ্ছে না, ভোগান্তি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

লোডশেডিংয়ের শিডিউল মানা হচ্ছে না, ভোগান্তি

মুক্ত আওয়াজ ডেস্ক : সরকার নির্ধারিত নিয়মে লোডশেডিং হচ্ছে না। ঘোষিত রুটিনের বাইরেও হরদম লোডশেডিং হচ্ছে। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে আবার কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না অনেক এলাকায়। বিদ্যুতের অভাবে যেমনি মানুষ ঘরে থাকতে পারছে না, তেমনি ব্যবসা বাণিজ্যেও প্রভাব পড়েছে।

শহরে বিদ্যুৎ যায় আর গ্রামে বিদ্যুৎ কিছু সময়ের জন্য আসে। গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নির্দেশনা অমান্য করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে চলে যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য। দেশের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সব এলাকায় একই চিত্র।

এর ফলে দেশজুড়ে চলা তাপদাহে গরমের তীব্রতায় অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যেও চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস আনা যাচ্ছে না। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে।

এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে আইপিএস ও চার্জারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বেচাবিক্রি বেড়ে গেছে। ইলেকট্রিক দোকানগুলোয় বেড়ে গ্রাহকের ভিড়।

নবাবপুরে আইপিএস ও চার্জার ফ্যান কিনতে আসা অন্তত ১০ জন ক্রেতা বলেছেন, লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে আইপিএস, চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের সরকারি ঘোষণা আসার পর অনেককেই আইপিএস, চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইট, জেনারেটর কেনার জন্য রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর মার্কেটে ছুটতে দেখা গেছে।

হঠাৎ করে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতারা বলেছেন, লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক গুণ। ঢাকার বাইরে থেকে দোকানিরাও এখানকার পাইকারি দোকানে আসছেন। কিন্তু সবাইকে পণ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। লোডশেডিং বিষয়ে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

রংপুর ব্যুরো জানায়, এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের সময়সূচি মানা হচ্ছে না রংপুরে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে গতকাল বুধবার দিনভর চলছে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা। আধাঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে তো দেখা নেই ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। রংপুর জুড়ে এভাবেই চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এতে করে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। প্রচ- গরম ও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় শিডিউল মেনে লোডশেডিং দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

জানা যায়, নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) মাধ্যমে রংপুর মহানগরীসহ আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর আওতায় কয়েক হাজার সাধারণ গ্রাহকসহ বিভিন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রংপুর জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ থেকে ১৫৫ মেগাওয়াট। সেখানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। চাহিদার প্রায় অর্ধেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কম। এ কারণে বিভাগীয় জেলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। সকালে মুন্সিপাড়া এলাকায় সকাল ৮টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। ৯টার দিকে বিদ্যুৎ এলেও তা আধাঘণ্টা পর আবার চলে যায়। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না। যদিও নেসকোর তালিকা অনুযায়ী মুন্সিপাড়া ফিডারের আওতাধীন প্রায় ১২টি এলাকায় বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত লোডশেডিং হওয়ার কথা ছিল। তবে সকাল থেকেই ওই এলাকাগুলোতে কয়েক দফা লোডশেডিং হয়েছে। নেসকোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তালিকা অনুযায়ী কোনো এলাকায় ১ ঘণ্টা লোডশেডিং হলে তারপর সেখানে ২ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের পর ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে। তবে বাস্তবে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে না। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রংপুর প্রেসক্লাবসহ এর আশপাশের এলাকায় ৮ বার লোডশেডিং হয়েছে। এ সময় আধাঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং স্থায়ী হয়েছে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাজশাহীতে ভয়াবহ লোডশেডিং দিচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রাজশাহীবাসী। ভয়াবহ এই লোডশেডিং দেয়ায় রাজশাহীজুড়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

রাজশাহীজুড়েও চলছে লোডশেডিং। এ লোডশেডিং পৃথকভাবে এক ঘণ্টা করে চলবে বলে বিভিন্ন এলাকার জন্য শিডিউল প্রকাশ করে রাজশাহী শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো লিমিটেড। কিন্তু মানা হচ্ছে না সেই শিডিউল। ফলে প্রখর রোদ ও ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে রাজশাহীর সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নাকাল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

রাজশাহীর চন্দ্রিমা থানার ছোট বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের প্রয়োজনে এক থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা তার সরকারি এই নির্দেশনা স্বাচ্ছন্দ্যেই মেনে নিয়েছি। তাই সকাল ৯টার দিকে বিদ্যুৎ গিয়ে ১০টার মধ্যে চলে আসায় খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু দুপুর ১টা ১৫ মিনিট থেকে আবার দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। পরে এসে ২০ মিনিট থেকেই আবার ২টা ৪৫ মিনিটে বিদ্যুৎ গিয়ে এসেছে ৪টা ৪০ মিনিটে। ফলে সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চার ঘণ্টার ওপরে বিদ্যুৎহীন রাখা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। কেননা, দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে ঘরে থাকা যাচ্ছে না, আবার বাইরে বের হলে প্রচণ্ড রোদে শরীর ঝলসে যাচ্ছে।’

নগরীর বিনোদপুর এলাকার ফরহাদ মোল্লা বলেন, ‘সকাল ও দুপুর মিলিয়ে এরই মধ্যে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। বিকাল ও রাতে কী হবে তাই ভেবেই আতঙ্কে আছি। এভাবে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের। কেননা তারা তীব্র গরমে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এর দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।’

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বগুড়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি কাটছেই না। ঘোষিত রুটিনের বাইরেও হরদম লোডশেডিং হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত নিয়ম না মানায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বগুড়া শহরের কলোনি এলাকায় সকাল ৮টা ৩২ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে ৯টা ৭ মিনিটে। অথচ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সময় দেওয়া রয়েছে দুপুর ১টা থেকে ২টা। আরেকটি সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা।

পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সোলাইমান বাদশা বলেন, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৩০ মেগাওয়াট। সেখানে গতকাল বুধবার সরবরাহ করা হয়েছে ১০৭ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল মাত্র ২৭ মেগাওয়াট।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জ্বালানি সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সময়সূচি মানতে পারেনি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ। ২য় দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এলাকাভিত্তিক পর্যায় ক্রমে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়ার কথা থাকলেও উপরওয়ালাদের নির্দেশে ভেঙে ভেঙে ১০ মিনিট ২০ মিনিট অথবা ৩০ মিনিট করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে বার বার। গতকাল বুধবার ছিল সরকারের শিডিউল লোডশেডিংয়ের দ্বিতীয় দিন।

সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। হরিরামপুর উপজেলার দিয়াবাড়ী গ্রামের আনোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান বিশেষ করে রাতের বেলায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ২-৩ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। গ্রামে প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে ৪-৫ ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হয় বলে জানায় এলাকাবাসী।

Comment here