সেই নবজাতককে পেলে লিখে দেবেন জমি, ৫ লাখ টাকা ‘পুরস্কার’ ঘোষণা! - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সেই নবজাতককে পেলে লিখে দেবেন জমি, ৫ লাখ টাকা ‘পুরস্কার’ ঘোষণা!

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ত্রিশালে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও বোন হারানোর সময় ‘অলৌকিকভাবে’ জন্ম নেওয়া নবজাতককে নিতে চান কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো. রেজাউল করিম। এই নিয়ে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

চকরিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি একটা কন্যা সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে অনেক আকুতি করেছি। একটি কন্যা সন্তানের আশায় আমার ঘরে মো. রাওয়াদুল করিম রাওয়াদ, মো. বিলওয়াদুল করিম বিলওয়াদ, মো. রাওয়ানুল করিম জারিফ ও মো. নাউফ করিম নাউফ নামের চার ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে। তারপরও আল্লাহর কাছে সন্তুষ্ট। আমার স্ত্রী হুমাইরা আকবর কাজলও ওই নবজাতক কন্যা শিশুটিকে মেয়ের স্নেহ দিয়ে বড় করতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যতবারই ওই নবজাতকের ছবি দেখি ততবারই বুক ফেটে কান্না চলে আসে। আমরা ওই নবজাতক কন্যা সন্তানকে নিজের মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে লালন-পালন করতে চাই। যে আমাকে ওই নবজাতককে পাইয়ে দিতে সাহায্য করবে, তাকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দিতেও আমি রাজি আছি।’

মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ওই নবজাতককে পেতে যেকোনো শর্ত পূরণ করতেও আমি রাজি আছি। ওই নবজাতকের নামে আমার যা সম্পত্তি আছে, ছেলেদের মতো সমান অংশ ওর নামে লিখে দেব। শুধু ওই নবজাতককে আমাদের কন্যা হিসেবে পেতে চাই।’

এর আগে গত শনিবার বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকের চাপায় নিহত হন অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) ও তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা।

অন্তঃসত্ত্বা রত্নার আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান জাহাঙ্গীর। সেখান থেকে ফেরার পথে ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলে তারা তিনজন মারা যান। তবে এ সময় মায়ের গর্ভ ফেটে নবজাতক জন্ম নেয়। সেই নবজাতক রাস্তায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে পুলিশ ও আশেপাশের লোকজন। পরে নবজাতককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, নবজাতক কন্যা জীবিত আছে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ সদরের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ (সিবিএমসি) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক্স-রে রিপোর্টে জানা যায়, শিশুর ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙে গেছে। ওই নবজাতক এখন বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সে শঙ্কামুক্ত আছে এবং আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাসহ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের আরও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। তারা হলো ১০ বছরের মেয়ে জান্নাত ও সাত বছরের ছেলে এবাদত। মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে এখন তারা নির্বাক, দিশেহারা স্বজনরাও।

দুর্ঘটনার পর পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করলেও পালিয়ে যায় চালক রাজু আহমেদ ওরফে সিপন। পরে গত সোমবার ঢাকার অদূরে সাভার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

তার কাগজপত্র পরীক্ষার করে দেখে যায়, রাজুর ভারী যানবাহন চালানোর অনুমতি ছিল না। কেবল মধ্যম সারির যান চালানোর একটি সনদ ছিল। সেটির মেয়াদও পেরিয়েছে ২০১৬ সালে। ট্রাকের মালিক রাজশাহীর ব্যবসায়ী মনজুর। ট্রাকটির ধারণক্ষমতা সাত টন হলেও ঘটনার সময় সাড়ে ১৩ টন মালামাল বোঝাই ছিল। ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ মালামাল নিয়ে চলা ট্রাকটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে পথচারীদের ওপর তুলে দেন চালক। এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 

Comment here