সবাই ভর্তি হলেও কলেজে আসন খালি থাকবে ৩ লাখ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
শিক্ষাঙ্গন

সবাই ভর্তি হলেও কলেজে আসন খালি থাকবে ৩ লাখ

এম এইচ রবিন : এ বছর এসএসসি পাস করা সব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পরও তিন লাখের বেশি আসন খালি থাকবে। তবে বরাবরের মতোই মানসম্পন্ন কলেজগুলোয় ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে। আবার অনেক কলেজে আসন খালি রয়ে যাবে। এর প্রধান কারণ, শহর-গ্রামের শিক্ষার মান ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য। শিক্ষাবিদরা বলছেন, সবার জন্য নিজের কাছাকাছি এলাকায় মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ বৈষম্য দূর করতে হবে। এ জন্য মফস্বলের কলেজগুলোর মানোন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এতে মাধ্যমিকের পর শিক্ষার্থীদের শহরমুখিতাও হ্রাস পাবে।

একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনাকারী ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া কলেজগুলোয় প্রায় ২০ লাখ আসন রয়েছে। অন্যদিকে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ শিক্ষার্থী।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন অর রশিদ গতকাল সোমবার আমাদের সময়কে বলেন, একাদশ শ্রেণির ভর্তিযোগ্য আসন নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেন। তারা বলে থাকেন, আসন সংকটে ভর্তি হতে পারবে না এত এত শিক্ষার্থী। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা উল্টো।

এ বছর যারা মাধ্যমিকে পাস করেছে, তাদের শতভাগ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও তিন লাখের বেশি আসন খালি থাকবে। কিন্তু নানা বাস্তবতায় কখনো মাধ্যমিকে পাস করা শতভাগ শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় না। সুতরাং আসন সংকটে কেউ ভর্তি হতে পারবে না- এমন আশঙ্কা ঠিক নয়।

তবে এটা ঠিক, আমাদের কিছু কলেজ রয়েছে এগুলো সবসময় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে। এসব কলেজে ভর্তির তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। আগেও হয়েছে, এবারও হবে। আবার অনেক কলেজে কোনো প্রতিযোগিতাই হয় না। এগুলোয় আবেদনকারীরা ভর্তির পরও আসন খালি থাকে।

তিনি বলেন, সব অভিভাবকই চান সন্তান ভালো একটি কলেজে পড়ুক। শহরে হাতেগোনা কয়েকটি কলেজ আছে, যেগুলোয় অভিভাবকদের আগ্রহ বেশি। মাধ্যমিক পাসের পর থেকেই লেখাপড়ার জন্য শহরমুখী একটা প্রবণতা থাকে। এর কারণ হচ্ছে, গ্রামের কলেজগুলোয় দক্ষ শিক্ষকের অভাব, শিক্ষক সংকট, বিশেষ করে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা শহরের ভালো প্রতিষ্ঠানমুখী হয়। এতে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রতিযোগিতা বাড়ে।

শিক্ষার্থীদের শহরমুখী হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শহরের স্কুলগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বেশি। এখানে শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করে। বিপরীত চিত্র গ্রামের স্কুলগুলোতে। গ্রামের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে শহরের ভালো স্কুলের শিক্ষার্থীর মেধার কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য কেবল সুযোগ-সুবিধার। শহর-গ্রামের লেখাপড়ার বৈষম্য কমিয়ে আনতে হলে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মানোন্নয়ন করতে হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক একরামুল কবির বলেন, আমাদের শহর ও গ্রামের কলেজের মান এক নয়। এটিই বড় সমস্যা। গ্রামের কলেজগুলোর মানোন্নয়ন হলে শিক্ষার্থীরা শহরে ছুটবে না। শহরে ব্যয় বেশি, সবার শহরে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও থাকে না। সরকারের উচিত গ্রামপর্যায়ের কলেজগুলোয় মানোন্নয়নে মনোযোগী হওয়া।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ অনুবিভাগ জানিয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। আপাতত করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। ১৫ জুন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এর মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে কবে থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে।

Comment here