সূর্যের চেয়ে পুরনো পদার্থ মিলল পৃথিবীতে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সূর্যের চেয়ে পুরনো পদার্থ মিলল পৃথিবীতে

রফিকুল ইসলাম : বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি ধাতব বস্তু বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন যে, এটিই পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন বস্তু। তারা ভূস্তরের শীলায় নাক্ষত্রিক ধূলার কণা খুঁজে পান।

এই ধূলি কণার বয়স ৭৫০ কোটি বছর। অর্থাৎ আমাদের সৌরজগত সৃষ্টি হওয়ার আগেকার ঘটনা। বাইরের অন্য কোনো নক্ষত্রের এ ধূলিকণা আমাদের পৃথিবীতে এসে পড়েছিল উল্কাপাতে। মুরচিসন উল্কাপাতের এ ঘটনা ঘটে ১৯৬৯ সালে।

গবেষণার আদ্যোপান্ত ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তারকা তৈরি হওয়ার সময় কিছু কণা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এই কণা নতুন কোনো তারকা, গ্রহ বা উপগ্রহ বা ধাতুর সঙ্গে মেশে।

শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের কিউরেটর, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর সহযোগী অধ্যাপক এবং এই গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক ফিলিপ হেক বলেন, ‘এগুলো নিশ্চিতভাবে তারকার কঠিন কণা অর্থাৎ প্রকৃত নাক্ষত্রিক ধূলিকণা।’

মুরচিসন উল্কায় পৃথিবীতে পড়েছিল ১৯৬৯ সালে। ছবি : বিবিসি

 

যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজল্যান্ডের গবেষকদল নিউজল্যান্ডের মুরচিসন শহরের ভূস্তরের ধাতব উপাদানের ৪০টি কণা বিশ্লেষণ করেন। এই গবেষণার সহযোগী জেনিকা গ্রির বলেন, ‘আমরা প্রাপ্ত ধাতব উপাদান প্রথমে গুড়া করি। যখন পুরো অংশ গুড়া করা হলো তা দেখতে অনেক পেস্টের মতো লাগছিল এবং এগুলো বেশ ঝাঁঝাল, অনেকটা পঁচা বাদামের মতো। এরপর প্রাপ্ত পেস্ট এসিড দ্রবণে দ্রবীভূত করা হয়।’

কত বছর ধরে এই কণার ওপর কসমিক রশ্মি নির্গত হচ্ছে, তা যাচাই করে কণাগুলোর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ কসমিক রশ্মিগুলো উচ্চ শক্তিকণা যা আমাদের গ্যালাক্সিতে বিচ্ছুরিত এবং বিভিন্ন কণায় রূপান্তরিত হয়। এই রশ্মির কিছু অংশ অন্য পদার্থের সঙ্গে ক্রিয়া করে এবং নতুন উপাদান গঠন করে। যত বেশি নিক্ষিপ্ত হবে, তত বেশি উপাদান গঠিত হবে। বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় কণার বয়স নির্ধারণে নিয়ন-২১ আইসোটোপ ব্যবহার করেছেন।

ড. হেক কণা গঠনের প্রক্রিয়া বুঝাতে বলেছেন, এটি অনেকটা কোনো পাত্রে বৃষ্টির পানি জমার মতো। যত বেশি বৃষ্টি হবে, পাত্রে তত বেশি পানি জমবে। কত সংখ্যক নতুন উপাদান আছে তা যাচাই করলে, কতক্ষণ কসমিক রশ্মি আপতিত হয়েছে তা জানা যায়।  গবেষণায় দেখা গেছে এ কণার উপর ৪৬০ থেকে ৪৯০ কোটি বছর ধরে কসমিক রশ্মি আপতিত হয়েছে। নাক্ষত্রিকে কণাটির বয়স আনুমানিক ৭৫০ কোটি বছর। তুলনার জন্য বলা, সূর্যের বয়স ৪৬০ কোটি বছর এবং পৃথিবীর ৪৫০ কোটি বছর।

বিজ্ঞানী হেক অবশ্য বিবিসিকে বলেছেন, শতকরা মাত্র ১০ ভাগ কণার বয়স ৫৫০ কোটি বছরের বেশি, শতকরা ৬০ ভাগ কণার বয়স ৪৬০ থেকে ৪৯০ কোটি বছর। বাকি কণার বয়স এই দুইয়ের মধ্যে।

হেক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, মুরচিসন খনিতে বা অন্যান্য ধাতব পদার্থে এর চেয়ে অধিক বয়সী কণার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে যা আমরা এখনো পাইনি।’

Comment here