দুর্যোগে সচেতন হোন ভেঙে পড়বেন না - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

দুর্যোগে সচেতন হোন ভেঙে পড়বেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্যোগে ভেঙে না পড়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্যোগ আসে, তা মোকাবিলা করতে হয়। দুর্যোগ এলেই ভেঙে পড়ার কিছু নেই। ইনশাআল্লাহ, আমরা এ থেকে শিগগিরই বেরিয়ে আসতে পারব। শুধু আমি সহযোগিতা চাই। যেন এই রোগের প্রাদুর্ভাবটা ছড়িয়ে না পড়ে। সেদিকে সবাইকে একটু সচেতন থাকা একান্ত অপরিহার্য।

গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গণভবন থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এপ্রিল মাসটা আমাদের জন্য কঠিন হবে। ভাইরাসটি ছড়ানোর একটা সংক্রমণ প্রবণতা আছে। আমরা আগেই সতর্ক করেছি। এই মাসে প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে করোনায় ১৫০ বাংলাদেশি মারা গেছেন। যুক্তরাজ্যেও চিকিৎসকসহ অনেক বাংলাদেশি মারা গেছেন। এ ক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশের কথা বলি, এপ্রিল পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি। আরেকটু সতর্ক হলে আরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা শুরু থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছি। এ জন্য করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। লকডাউনসহ আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, যেখানে লোকসমাগম হয়, যেমন- স্কুল-কলেজ সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। করোনা ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্ব এখন আতঙ্কিত। অতীতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ। মক্কা ও মদিনা শরিফ এবং ভ্যাটিকানের দিকে দেখুন। মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডার একই অবস্থা। অদ্ভুত একটি দৃশ্য, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু জীবন থেমে থাকবে না। যারা বাজারে যাবেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করবেন।

ত্রাণ বিতরণ পর্যবেক্ষণে সচিবরা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে সচিবালয়ে দৈনন্দিন কাজের চাপ কম হওয়ায় সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখন থেকে জেলা পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আবারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

মাস্ক বিভ্রান্তির সমালোচনা

স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে সাধারণ মাস্ক দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে নির্দেশ দেন। পরে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ ব্যাখ্যা দিতে গেলে তাকে থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এন-৯৫ লেখা আপনাদের বক্সে। কিন্তু ভেতরের যে জিনিসটা, সেটা সঠিক থাকে কিনা, এটা একটু আপনাদের দেখা দরকার। আপনারা দিয়ে দিচ্ছেন, বলে দিচ্ছেন। কিন্তু যারা সাপ্লায়ার, তারা ঠিকমতো এটা দিচ্ছে কিনা বা সঠিক জিনিসটা কিনছে কিনা, এটা দেখা দরকার। আমি মন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি ছবিটা, ওটা যাচাই করে দেখার জন্য।

শ্রমিকদের আনা ঠিক হয়নি

ঢাকা ও আশপাশের কারখানায় তৈরি পোশাককর্মীদের গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে আনা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সুপারভাইজারকে দিয়ে শ্রমিকদের ফোন করানো হলো। এভাবে শ্রমিকদের ডেকে আনা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। মাইলের পর মাইল হেঁটে এসেছে। শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা যেমন করা হবে, নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।

গার্মেন্টস চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু কিছু শিল্প আছে যাদের পণ্য রপ্তানি হবে। এ জন্য আমাদের লক্ষ্য আছে কিছু কিছু খোলা রাখা। বিশেষ করে ওষুধশিল্প, অ্যাপ্রোন থেকে শুরু করে হেড ক্যাপ, সু ক্যাপ এগুলো যারা তৈরি করছে তাদের জন্য খোলা রাখতেই হচ্ছে। যেসব মালিক কারখানা খুলতে চান, তারা স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে কীভাবে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেবেন তা আলোচনা করে ঠিক করতে পারেন। কারখানার মধ্যে কোনো ফাঁকা জায়গা থাকে সেখানে যদি তাদের থাকার ব্যবস্থা করা যায়, যেখানে তারা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা যেখানে আছে তারা সেখানে সেই ব্যবস্থা করতে পারে।

প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের কত পার্সেন্ট আসতে চায় তা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তাদের আনতে হলে আনার ও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় থাকতে পারে। তা হলে তারা এটা চালু করতে পারবে। এটাও ঠিক, সামনে রোজা। সবাইকে একেবারে বন্ধ করে রাখতে পারব না। আস্তে আস্তে কিছু কিছু জায়গায় উš§ুক্ত করতে হবে।

গাজীপুরে করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, গাজীপুরে এই রোগের প্রাদুর্ভাবটা খুব বেশি দেখা দিচ্ছে। আপনাদের চিন্তা করতে হবে ২৪ বা ২৫ তারিখে শিল্প কারখানা চালু করা ঠিক হবে কিনা। এটা বুঝে নিয়েই শিল্প খোলার কথা বা সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। তবে বলব না যে একদম বন্ধ থাকুক। সীমিত আকারে সেই পরিমাণ শ্রমিক আসতে হবে। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এটা ঠিক করতে হবে। নেতাদের (গার্মেন্ট মালিক) সঙ্গে আমি এ বিষয়ে বসব, কথা বলব।

রোজায় পণ্য ঘাটতি যেন না হয়

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে যাতে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। রোজার মধ্যেও বিশেষ খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় থাকার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। ধান কাটা শুরু হয়েছে। আশা করি খাদ্যের অভাব হবে না। এ ছাড়া আমরা ২১ লাখ টন খাদ্য কিনে রাখব, যাতে খাদ্যের জোগান দিতে পারব।

ঈদের নামাজ না হওয়ার ইঙ্গিত

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী সেখানকার পেশ ইমাম মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদের কথা শুনতে চান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানকার শোলাকিয়ায় ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত হয়। এবার ঈদের নামাজের জামাতও তো আমরা করতে পারব না।

কিশোরগঞ্জে প্রচুর ধান উৎপাদনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান সেখানে আধুনিক রাইস মিল আছে কিনা। জবাবে জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নেই বলে জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিশোরগঞ্জের মানুষ কিশোরই থেকে গেছে। তারা চিন্তাই করেনি, একটা রাইস মিল লাগবে। হাওরে মাছ ওঠে, তার জন্য হ্যাচার্ড তৈরি করা। তো এ জন্য বললাম, কিশোরগঞ্জ একদিকে কিশোর থেকে গেছে, আবার ওদিক থেকে দেখা গেল, কিশোরগঞ্জ তো রাষ্ট্রপতির জেলা। কিশোরগঞ্জ থেকেই স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন। এর পর জিল্লুর রহমান সাহেব রাষ্ট্রপতি, এখন হামিদ সাহেব রাষ্ট্রপতি। মানে কিশোরগঞ্জ হলো রাষ্ট্রপতির জেলা। সে জন্য কিশোরগঞ্জ মনে করে, আমরা তো রাষ্ট্রপতি। এ জন্য বোধহয় কিছুই হয় না।

দুর্ভিক্ষরোধে কাজ করুন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি খাদ্য উৎপাদন করে মজুদ রাখতে পারি তা হলে দুর্ভিক্ষে পড়ব না; বরং অনেককে সাহায্য করতে পারব। সেই ব্যবস্থা এখন থেকে নিতে হবে। সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। তিনি বলেন, কারও এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন কিছু চাষ করেন। ধান কাটার পর নতুন আরেকটা ফসল কী করা যায়, আমাদের সেটা করা উচিত।

যারা ধান কাটতে অন্য এলাকায় যেতে চান তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি। কৃষকদের ধান কেটে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছে। অন্যান্য সংগঠনকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

Comment here