‘পানিতে সব তলিয়ে গেছে, থাকার জায়গাটুকু নেই’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

‘পানিতে সব তলিয়ে গেছে, থাকার জায়গাটুকু নেই’

নেত্রকোনা প্রতিনিধি :‘পানিতে রাস্তা-ঘাট, দোকানপাটসহ সবকিছু তলিয়ে গেছে, আমাদের থাকার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। পানি সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। গরু-বাছুর নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছি। হঠাৎ করে নদীর পানি বেড়ে আমাদের সবকিছু নিয়ে গেছে।’

কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার গাওকাঁন্দি ইউনিয়নের বন্দ উষান গ্রামের জয়নাল আবেদিন।

একই ধরনের কথা বলেন জেলার কলমাকান্দার কৈলাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফানীয় গ্রামের হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। থেমে থেমে বৃষ্টি ও শুক্রবার ভোরে ভারি বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বেড়ে যায়। আমার ইউনিয়নের হাফানিয়া, বড়পাড়ুয়া, মন্ডলেরগাতী, কৈলাটীসহ আশপাশের সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এখন খুব বিপদের মধ্যে আছি। বাড়ির উঠানে এখন হাঁটু পানি। চলাচলের কোনো উপায় নেই। মানুষের থাকার মতো জায়গা নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পানি ভোর থেকেই পৌর শহরের চরমোক্তার পাড়া, মুজিবনগর আবাসন, দক্ষিণপাড়া আবাসন, চকলেঙ্গুরা ও শিবগঞ্জ বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করে। কিছু কিছু এলাকায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় শহরের দোকানপাট প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বিরিশিরি ও দক্ষিণ ভবানীপুর এলাকার নিন্মাঞ্চলগুলো।

advertisement

নতলা গ্রামের মানিক সরকার বলেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৩৪৩টি গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুকুর, ফিসারি সব পানির নিচে। ৭৪ ও ৮৮ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে এবারের বন্যা। গরু-বাছুর নিয়া আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। আমাদের উপজেলাকে সরকারের দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা দরকার।

সদর উপজেলার বাঘরুয়া গ্রামের কৃষক শাহ আবুল খায়ের বলেন, বাড়িঘর, সড়ক পানির নিচে। চলাচল করার মতো রাস্তা নেই।

টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া জেলার দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে করে উপজেলার গাওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, বিরিশিরি, দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। বেশ কয়েকটি বসতঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নৌকা ও কলার ভেলা তৈরি করে মানুষ জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করছে। একই অবস্থা জেলার কলমাকান্দায়। উপজেলার আটটি ইউনিয়নে বেশিরভাগ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই সমস্ত গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জেলার প্রায় সবকটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলায় ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলাসহ মেডিকেল টিম নিয়োজিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ গবাদি পশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে ক্রমশ পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। খালিয়াজুরীতে সেনাবাহিনীর লোকজন কাজ করছে।

Comment here