ফাল্গুন সঙ্গী করে আজ শুরু বইমেলা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ফাল্গুন সঙ্গী করে আজ শুরু বইমেলা

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক : সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ফাল্গুনী আমেজ নিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে পর্দা উঠছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৩৮তম আসরের। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। বিকাল ৩টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর।

স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রদান করা হবে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১। গতকাল রবিবার মেলা নিয়ে

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলা একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমান, বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ প্রমুখ। এ সময় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডের কারণে এবার বইমেলার সময়সীমা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন যেভাবে কোভিডের সংক্রমণ কমছে সেভাবে যদি চলতে থাকে তা হলে হয়তো আমরা মেলার সময়সীমা খানিকটা বাড়াতে পারব। তবে কঠোরভাবে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক ব্যতীত প্রবেশ করা যাবে না বইমেলায়, লাগবে টিকা সনদও।’

প্রকাশকদের প্রণোদনা নিয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই মেলা হচ্ছে প্রকাশকদের মেলা। তারা একটি মেলার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করেন। আমরা কোনোভাবেই চাইব না, মেলার প্রাণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হোক। গত বছর তাদের থেকে অর্ধেক ভাড়া নিয়েছি। এবার মেলার সময়সীমা যদি বাড়ানো হয় তা হলে মনে করি সেটি তাদের জন্য প্রণোদনা হবে।’

সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় এবার আমরা মেলা আয়োজন করতে পারছি। মেলায় সরকারের স্বাস্থ্য প্রটোকল আমরা মেনে চলব। সার্বক্ষণিক একটি মোবাইল কোর্ট থাকবে, যেন গেটে মাস্ক পরে ঢুকে মেলার ভেতরে কেউ মাস্ক ছাড়া থাকতে না পারে। আমরা প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতিকে বলেছি, প্রতিটি দোকানে ?‘নো মাস্ক নো সেল’ ব্যানার থাকবে। মেলার খাবারের দোকানে ঢুকতে হলে সবার অবশ্যই টিকা সনদ থাকতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে। মহামারী পরিস্থিতির কারণে মেলায় যাতে স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণভাবে মান্য করা হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মেলার বিন্যাসেও আনা হয়েছে কিছু পরিবর্তন। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট দেওয়া হয়েছে। মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৭৬টি ইউনিট। মেলায় প্যাভিলিয়ন থাকছে ৩৫টি। প্যাভিলিয়নগুলো উদ্যানের সব প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও এ বছর লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে থাকছে না ‘শিশুপ্রহর’। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা। বইয়ের প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে।

বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকছে ৪টি প্রবেশ ও ৩টি বের হওয়ার পথ। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য থাকছে প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা। বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

এ ছাড়া মেলা এলাকাজুড়ে থাকছে প্রায় তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

অন্যবারের মতো এবারও বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিন প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হবে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার। এ ছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হবে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।

এবার বইমেলা আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রæয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং শেষ হবে রাত ৯টায়।

 

Comment here