বেলুন বিক্রেতা থেকে ‘সাংবাদিক’ অতঃপর; ইয়াবা ব্যবসায়ী - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বেলুন বিক্রেতা থেকে ‘সাংবাদিক’ অতঃপর; ইয়াবা ব্যবসায়ী

গ্রাম্য মেলায় শিশুদের খেলনা বেলুন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বশির আহমেদ(৩৯)। কিন্তু এই ব্যবসায় লাভ কম হতো বলে এক সময় জড়িয়ে পড়েন মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসায়। খুব অল্প সময়ে প্রচুর টাকা উপার্জন করা যেত বলে একসময় সহযোগী হিসেবে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রিবাকেও(১৯) নিয়ে আসেন এ পেশায়। আর মাদক পাচারে যেনো কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য বানিয়ে নিয়েছেন ভুয়া সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র। এই কার্ড দেখিয়ে পার পেয়ে গেছেন বহু জায়গায় কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

গতকাল বুধবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব-১) অভিযানে গাজীপুরের টঙ্গি এলাকার ৩০ নং আনার কলি এলাকায় থেকে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন এই দম্পতি।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ সারওয়ার বিন কাসেম দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে এ সব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান এ অভিযানে বশির দম্পতির সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের দু’জন সহযোগী আনিসুর রহমান (২১) ও রুবেল আহম্মেদকে (৩৯)।আটক করার পর র‌্যাব তাদের কাছ থেকে ৩২ হাজার ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট,  ব্রান্ডের ৬ টি মোবাইল ফোন, নগদ আট লাখ টাকা, একটি পাসপোর্ট,একটি ব্ল্যাংক চেক ও অনলাইন পত্রিকার একটি ভুয়া পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) জব্দ করে।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বশির আহমেদ জানায়, বিভিন্ন শহর ও গ্রামগঞ্জের মেলায় বেলুন ও শিশুদের খেলনা বিক্রি করত সে। কিন্তু তাতে খুব বেশি লাভ না হওয়ায় একটা সময় যোগসাজগে নেমে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। সহযোগী হিসেবে স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রিবাকেও এ পেশায় নিয়ে আসে। স্ত্রীকে এ ব্যবসায় নামানোর কারণ হলো-কোনো কারণে যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখী হয়, তাহলে যেন বলতে পারেন তারা স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বেড়াতে এসেছেন।

এছাড়া ইয়াবার চালান আনা-নেওয়ায় ঢাকার বাইরে যেতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য বানিয়ে নিয়েছেন সাংবাদিকতার ভুয়া পরিচয়পত্র। ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত এশিয়ান নিউজ২৪ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের কার্ড বানিয়ে নেয় সে।

এরপর সাংবাদিক পরিচয়ে কৌশলে ইয়াবার চালান চট্টগ্রাম থেকে গাজীপুরের টঙ্গীতে আনা-নেওয়া করত সে।এরপর টঙ্গীর মাদক ব্যবসায়ী রুবেল আহমেদ কাছ থেকে সেই চালান পুণরায় নিয়ে খুলনার মাদক ব্যবসায়ী রাজুর কাছে পৌঁছে দিত বশির।

বশিরের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অপর আনিসুর রহমানও পেশায় একজন বেলুন ব্যবসায়ী ছিলেন। বেলুন ব্যবসার সূত্র ধরেই বশিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। চট্টগ্রাম থেকে বসির ও তার স্ত্রী ইয়াবার চালান নিয়ে খুলনা যাওয়ার সময় আনিসুর রহমান পথে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন। এরপর ইয়াবার সেই চালান ঢাকায় এনে তা খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ কাজে সহযোগিতা করত সে।

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ী রুবেল আহমেদ কাজ করতেন একটি বেসরকারী কোম্পানির (মেসার্স মিম এন্টারপ্রাইজ) ম্যানেজার পদে। চাকরিকালীন সময়ে কোম্পানির মালিক রহমান খান রাহুল ইয়াবা ব্যবসার ব্যাপারে রুবেলকে প্রথম প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে অতি স্বল্পসময়ে বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ইয়াবা ব্যবসায় নামের রুবেল।  এরপর ওই কোম্পানীল মালিক রুবেলকে চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ী রহমতউল্লাহ সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় করিয়ে দেন।

ফোনে পরিচয় পর থেকে মাদক আনা-নেওয়ায় ইয়াবা ব্যবসায়ী বশির আহমেদের সঙ্গে পরিচয় হয় রুবেলের। এরপর থেকেই এভাবেই একে অপরের সঙ্গে যোগসাজগে তারা ইয়াবা ব্যবসা করত বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

Comment here