১৮ বছরে জগন্নাথে ৩শতাধিক পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
শিক্ষাঙ্গন

১৮ বছরে জগন্নাথে ৩শতাধিক পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক

রোকাইয়া তিথি, জবি প্রতিনিধি: পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম স্কুলের পরিবর্তিত রূপই আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যা ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় রূপে আত্মপ্রকাশ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৮ বছরে যোগ হয়েছে ৭শতাধিক শিক্ষক যাদের মধ্যে ৩শতাধিক শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে। এতো বিপুলসংখ্যক শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে গ্রহন করছে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, একটি উচ্চ ডিগ্রি মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে বৃদ্ধি করে। নতুন নতুন আইডিয়া ডেভেলপ করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। কাজেই তখন একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী ব্যাক্তিকে জ্ঞানের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরির চিন্তা তাকে ত্বারিত করে। ফলে যত বেশি পিএইচডি ডিগ্রির সংখ্যা হবে ততো বেশি আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়বে, আইডিয়া তৈরি করার ক্ষেত্রও বৃদ্ধি পাবে।”

উদ্যমি শিক্ষক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মহিউদ্দিনকে  তাঁর পিএইচডির বিষয়বস্তু এবং বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষকদের গবেষণা  সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন,”একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনা থেকে যে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়, তা হলো উচ্চশিক্ষা। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় সামনে আসে; একটি প্রশিক্ষক এবং অপরটি গবেষক। গবেষণার ক্ষেত্রে পিএইচডি, এমফিল বা গবেষণা কেন্দ্রিক অন্যান্য কাজ একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ একটি বিষয় সম্পর্কে গবেষণা না হলে আমাদের ধারণা আসবে না তেমনিভাবে পিএইচডি, এমফিল, থিসিস উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনুষঙ্গ। একটি বিষয়ে তিন বছর বা পাঁচ বছর গবেষণা করার পরে তা থেকে আহরিত জ্ঞান শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, সমগ্র দেশ এবং বিশ্বের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।”

তিনি আরো বলেন, করোনা আমাদের কাছে একটি নতুন বিষয় ছিল। এ সময় অনেক গবেষণা হয়েছে বলেই ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়। বিশ্ববিদ্যলয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যেমন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরি স্থাপন করা এবং অনুদান প্রদান করা, এইটা শুধুমাত্র শিক্ষকদের জন্য নয়, শিক্ষার্থীদের জন্যও।” গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে যখন ফিল্ডে কাজ করবে তখন সবাই উৎসাহিত হবে। যেমন আমার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিলো রোহিংগা আসার ফলে আমাদের ট্যুরিজমে পরিবেশগত, সামাজিকগত ও অর্থনৈতিকভাবে কিভাবে প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নির্ভর ট্যুরিস্ট স্পট যেমন কক্সবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা রয়েছে। যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভুটান, থাইল্যান্ড, নেপালের মূল অর্থনৈতিক জিডিপি আসে ট্যুরিস্ট থেকে। আমাদের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটি করতে পারতাম তখন যেমনভাবে পরিবেশ সংরক্ষিত হতো আবার অর্থনৈতিভাবে ভাবেও লাভবান হতাম। পাশাপাশি অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হতো, আবার একইসাথে  ট্যুরিস্ট সিকিউরিটির দিকটিও উঠে আসে, যখন এইসব বিষয় নিয়ে গবেষণা হবে তখন পলিসিমেকাররা নির্দেশনা পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও এই সেক্টরগুলো উন্নত হবে। বিভিন্ন সেক্টরে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রিতে গবেষণা হলে যেমন আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রঙ্কিংয়েও শীর্ষে থাকবে তেমনি ভাবে শিক্ষক শিক্ষার্থীও স্কিলড হতে পারবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে পিএইচডি বা উচ্চ শিক্ষার বিষয়সমূহ ভূমিকা পালন করছে এবং শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন জানতে চাইলে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও প্রথম  অধ্যাপক ড. প্রতিভা রানী কর্মকার বলেন, আমি যেমন পিএইচডি করেছি ইংরেজির ওপর, এমফিলও করেছি ইংরেজি ভাষার ওপর। সেক্ষেত্রে আমি যখন আমার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ায় বা মাস্টার্সের স্টুডেন্টদের যখন সুপারভাইজ করি তখন আমি চিন্তা করি আমি যে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেছি। নিশ্চয়ই  বিষয়বস্তু নির্ভর বিষয়ের সাথে আরো কিছু জিনিস শিখেছিলাম।  যেগুলো আমার বাস্তব জীবনেও অ্যাপ্লাইড করা যায়। আবার আমার স্টুডেন্টদের সাথে আমার অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমাদের অর্জিত জ্ঞান তাদেরকে দিতে হবে যেনো জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান বিতরণ এ দুটো যেনো সমানতালে হয়।”

তিনি আরো বলেন, আমি প্রতিদিন সার্চ করি নতুন কিছু এসেছে কি না আমার সাবজেক্টে, আমি যে শুধু পিএইচডির ওপর নির্ভর করে থাকছি তা নয়। কিন্তু পিএইচডি বা এমফিল বা অনার্স মাস্টার্সকে ভিত্তি করে আমি তাদেরকে আরো নতুন নতুন জ্ঞান দেওয়ার জন্য কাজ করি। আমাদের পিএইচডি বা এমফিল এর শিক্ষাটা আমাদেরকে শক্তি দেয়। আমি আমার উচ্চতর যে জ্ঞানঅর্জন করেছি তার শিক্ষা আমার শিক্ষার্থীদেরকে দিতে পারি। পাশাপাশি আমরা ওই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় আমরা শিক্ষকরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি পরবর্তিতে তা আরো বেশি আমাদের ব্যক্তিত্বকে সম্মৃদ্ধ করেছে। আমাদের জ্ঞানকে সম্মৃদ্ধ করেছে, আমাদের কথা বলার ভঙ্গিমাকে আরো বেশি রুচিশীল, শালীন করেছে সেই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করা উচিত বলে আমি মনে করি। এতে করে পরবর্তীতে যখন তারা আমাদের অবস্থানে যাবে তখন ওই সমাজে ওইদিক টা তে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। আমি শুধু উচ্চশিক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকি না আমাদের সাবজেক্টে আরো নতুন কোন কোন দ্বার উম্মোচিত হয়েছে এই বিষয়গুলো ও শেয়ার করি।”

Comment here